যে আকাঙ্ক্ষা মানুষকে সদা কর্মচঞ্চল রাখে তা হলো- সুন্দর জীবন নির্মাণ। তবে সুন্দর জীবনটি কেমন হয়, হবে বা হওয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা ও অনুসন্ধানের শেষ নেই। এর একটি সাধারণ অথচ গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে- জীবন বহুমাত্রিক। সে জন্য জ্ঞানী-গুণী অনুসন্ধানীরা সুস্থ দেহের ওপর জোর দিয়েছেন। আবার প্রাকৃতিক পরিবর্তনগুলো দৈহিক সুস্থতাকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করে বিধায়, এই প্রকৃতিনির্ভর বক্তব্যও বহু। তবে এর ভিত্তি শক্ত, কারণ মানুষ সামনের দিকে এগোতে থাকলে তারা শারীরিকভাবে দুর্বল হতে থাকে। সুস্থতা এই দুর্বলতাকে অনেক দিক দিয়ে এর গতিকে শ্লথ করে ফেলে।
মানুষ যেমন নিজের প্রয়োজনে সময়কে বছর, মাস, দিন, ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ডে ভাগ করে নেয়, তার কর্মকাণ্ডগুলোকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য, সেখানে তাকে কিছু নিয়মনীতি সৃষ্টি করতে হয়, এগুলোকে সহজ করার জন্য। সবারই লক্ষ্য, সুন্দর জীবন। ড. খালিদ আল-মুনীফ জানিয়েছেন সুন্দর জীবনের জন্য কিছু অভ্যাসের নিপুণ চর্চা হওয়া জরুরি। ওই সব অভ্যাসের অন্যতম হলো-
১. খুব ভোরে ফজরের সময় ঘুম হতে জাগ্রত হওয়া। দিনের অগ্রভাগের প্রফুল্লতা ও উদ্যমতাকে কাজে লাগানো। প্রত্যুষের অবারিত বরকতকে নিজের করে নেওয়া। কতইনা চমৎকার সেই দৃশ্য! একজন সকাল পেলো, এদিকে চারপাশের পরিবেশটা নীরব ও প্রশান্ত। আর সে মনোযোগ দিয়ে নিজের কাজটি করলো।
২. জামাতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। অন্যান্য নফল নামাজের প্রতি নিজেকে আগ্রহী করে তোলা। দোয়া, জিকির ও কোরআন তেলাওয়াতে নিজেকে অভ্যস্ত করা।
৩. আপনার ওপর আল্লাহতায়ালার অবারিত নেয়ামত ও অনুগ্রহকে স্মরণে রাখুন। তারপর বুক ভরে দয়াময় আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করুন। এভাবে সর্বদা ইতিবাচক ধ্যান-ধারণা ও সুপ্ত মনোভাব নিজের ভেতর লালন করুন।
৪. সদা প্রফুল্ল ও হাস্যোজ্জ্বল থাকা। অন্যের হৃদয়ে আনন্দ বিলিয়ে দেওয়া। মুচকি হাসিটা যেনো মুখে লেগেই থাকে আপনার। কারণ, এটি চেহারার শোভা। তাছাড়া একটি নির্মল হাসি ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকেও আকৃষ্ট করে।
৫. নিজের ভেতর জমে থাকা যত চিন্তা-দুশ্চিন্তা আছে, সবকিছুকে ঝেড়ে ফেলুন। সকল প্রকার নেতিবাচকতা হতে যোজন যোজন দূরে থাকুন। কখনও কোনো মন্দ কিংবা খারাপ সংবাদ প্রচার না করা। যেকোনো দুর্ঘটনা, নিহতের সংবাদ কিংবা এ জাতীয় গোলোযোগপূর্ণ খবরা-খবরের প্রতি দৃষ্টি না দেওয়া। কারণ, এটি আপনাকে ধীরে ধীরে অসুস্থ এমনকি আতঙ্কিত করে তুলবে।
৬. যেকোনো কথা বলতে কিংবা কারও কোনো কথার উত্তর দিতে ধীর-স্থিরতা অবলম্বন করা অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ। কখনও কোনো কাজে তাড়াহুড়া করতে নেই। কারণ, দ্রুততা ব্যক্তিকে লজ্জিত করে। যেকোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে কিংবা সমস্যা মোকাবেলায় গভীর ভাবনা, ধীরতা, ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেওয়া চাই।
৭. অপরের প্রতি তার ব্যবহারে সদা কৃতজ্ঞ হওয়া। এমনকি এমন চমৎকার অভ্যাসকে নিজের নিত্য-অভ্যাস করে নেওয়া। প্রত্যেক সুন্দর কাজের মূল্যায়ন করা। অন্যের প্রতিটি ভালো কাজের প্রশংসা করা, উৎসাহ দেওয়া।
৮. নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি পূর্ণ মনোযোগী হওয়া। কারণ সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে ব্যক্তির সত্বার এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সেজন্য ভালো, পুষ্টিকর এবং পরিমিত খাবারের বিকল্প নেই।
৯. প্রতিদিন এমন করে যেন আপনার সময় অতিবাহিত হয়, যেন আপনি নতুন কিছু জানছেন কিংবা শিখছেন। তাই নিত্য আপনার জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করুন।
১০. বড়-ছোট যেকোনো বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা। কারও কথা শুনছি তো, মনোযাগের সঙ্গে শোনা চাই। আপনার এই চুপ থাকা কিন্তু আপনাকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার এক ভিন্ন পরিচয়ে আসীন করে।
১১. যা আমার সঙ্গে যায় না কিংবা আমার দায়িত্বের অংশ নয়, তাতে সময় ক্ষয় না করা। কারণ তাতে নিজেকে বেকার-বেকার লাগে। অন্যের ব্যক্তিগত কোনো বিষয়ে দখল নিতে যাওয়া অনুচিত। এসব অনর্থক বিষয় ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে হালকা করে দেয়।
১২. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য আলাদা একটি সময় নির্ধারণ করা চাই। কারণ সময় অনেক মূল্যবান।
১৩. কোমলতা ও উদারতা দিয়ে একটি জিনিসকে ভাবুন। সংকীর্ণতার গলিঘুপচি হতে নিজেকে বের করে আনুন। চিন্তার সৌন্দর্যতাকে কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টা করুন। যেকোনো বিষয়কে একটু ভিন্নরূপে অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা করে ভাবুন।
১৪. শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী ঘুমান ও বিশ্রাম নিন। এতো অধিক পরিমাণ না ঘুমানো যে, বদঅভ্যাস তৈরি হয়। আবার এতো কমও না যে, অসুস্থ হয়ে যেতে হয়।
১৫. সময় ও সুযোগ মিললেই সাধ্যমতো সামাজিক ও মানবকল্যাণে ব্যয় করুন।