দুশ্চিন্তা, দোষারোপ ও অবজ্ঞা নয়

বিশেষ নিবন্ধ, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 08:01:59

মনে করুন, আজই আপনার জীবনের শেষ দিন, এভাবে দিন কাটান। যদি জীবন সম্বন্ধে এমন দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তবে যে সময়টুকু আপনি পাবেন- তা অযথা নষ্ট হবে না। কোনো না কোনো ভালো কাজ করতে আপনি সক্ষম হবেন। এক হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সকাল বেলা সন্ধ্যা দেখার আশা করো না। আর সন্ধ্যাকালে সকাল দেখার আশা করো না।’ অন্যকথায়, অতীত নিয়ে না ভেবে ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে; আত্মা-দেহ-মন নিয়ে জীবন শুধু আজকের জন্যই।

অতীতের চিন্তায়-বিভোর হওয়া এবং অতীতের দুঃখ-কষ্টকে বর্তমানে টেনে আনা অস্থির ও অসুস্থ মনের লক্ষণ। এক বুজুর্গ আলেম বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান! নিশ্চয় তোমাদের দিন মাত্র তিনটি। গতকাল আর এটা তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আগামীকাল যা এখনও আসেনি এবং আজ। সুতরাং আজকের দিনে আল্লাহকে ভয় করো, তাকে মান্য করো।’

যে ব্যক্তি সারাক্ষণ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের চিন্তা বয়ে বেড়ায়, সে মূলত ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। অতীতে যা ইতোমধ্যে ঘটে গেছে, সর্বদা সেটার চিন্তা করে মনে শান্তি পাওয়া যায় না। যে অতীতের কোনো দুঃখজনক ঘটনার কথা মনে করে, সে শুধু কষ্টই পায়, এতে তার কোনো লাভ হয় না।

বস্তুত ‘সকালে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাঁচার আশা করো না ও সন্ধ্যায় সকাল পর্যন্ত বাঁচার আশা করো না’ এ কথার অর্থ হলো, এ পৃথিবীর জন্য আমাদের বড় ধরনের ও দীর্ঘকালীন আশা থাকা উচিত নয়। মৃত্যুর জন্য প্রতীক্ষা করুন। নেক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা করুন। আপনার উদ্বেগ ও আকাঙ্ক্ষাকে দিনের সীমা পেরিয়ে যেতে দেবেন না। এ নীতি আপনাকে মনোযোগী হতে এবং প্রতিদিন উৎপাদনশীল হওয়ার জন্য আপনার সমস্ত শক্তিকে ব্যয় করতে সাহায্য করবে। দক্ষতার সঙ্গে সময়কে কাজে লাগান এবং আচার-আচরণে উন্নতি করে, স্বাস্থ্যের যত্ন নিয়ে ও অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করে কিছু অর্জনের জন্য সকল প্রচেষ্টা কাজে লাগান। অন্যদের দোষারোপ ও অবজ্ঞায় দুঃখ করবেন না।

অন্যদের ব্যক্তিত্বের অনুকরণ করবেন না, ‘প্রত্যেক জাতির জন্যই একটি দিক আছে যেদিকে সে মুখ করে। অতএব, তোমরা নেক কাজে প্রতিযোগিতা করো।’ -সুরা আল বাকারা : ১৪৮

‘এবং তিনিই তোমাদেরকে (একের পর এক আগমনকারী, একের স্থলে অন্যকে স্থাপন করে) পৃথিবীতে প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন এবং তোমাদের কাউকে মর্যাদায় অন্যের ওপরে স্থান দিয়েছেন।’ -সুরা আনআম : ১৬৫

‘প্রতিটি লোকেরই তার নিজস্ব মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা ও পছন্দ-অপছন্দ আছে। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্রের একটি দিক ছিল তার পরিচালনা করার যোগ্যতা; তিনি সাহাবিদেরকে প্রত্যেকের মেধা ও যোগ্যতা অনুসারে কাজে লাগাতেন।

হজরত আলী (রা.) সৎ ও বিজ্ঞ ছিলেন, তাই নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত মুয়াজ (রা.)-কে ইলমের জন্য, হজরত উবাই (রা.)-কে কোরআনের জন্য, হজরত যায়িদ (রা.)-কে ফারায়েজের জন্য, হজরত খালিদ (রা.)-কে জিহাদের জন্য, হজরত হাসসান (রা.)-কে কবিতার জন্য এবং হজরত কায়েস ইবনে সাবিত (রা.)-কে জনসমক্ষে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য কাজে লাগিয়েছিলেন।

যেকোনো কারণেই হোক, অন্যের ব্যক্তিত্বে নিজেকে বিলীন করে দেওয়া আত্মহত্যার শামিল। অন্যের প্রাকৃতিক স্বভাবকে অনুকরণ করা নিজেকে মৃত্যুর আঘাত হানার শামিল। আল্লাহর নিদর্শনাবলী সকলের মাঝে বিক্ষিপ্ত। মানুষভেদে বিভিন্ন বৈশিষ্ট আলাদা আলাদা। যেমন মানুষের মেধা ও বিভিন্ন রং এবং আচার-আচরণ, বৈশিষ্ট্য। উদাহরণস্বরূপ, হজরত আবু বকর (রা.) তার ভদ্রতা ও উদারতার মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিম জাতির অনেক উপকার করেছেন। অপরপক্ষে, হজরত ওমর (রা.) তার দৃঢ় আচরণ, কঠোর আত্মসংযম ও অনাড়ম্বতার দ্বারা ইসলাম ও এর অনুসারীদেরকে সাহায্য করেছেন।

তাই আপনার সহজাত প্রতিভা ও অক্ষমতায় সন্তুষ্ট থাকুন। সেগুলোকে উন্নত করুন। সেগুলোকে প্রসারিত করুন এবং সেগুলো হতে উপকৃত হোন। ‘আল্লাহ কারও ওপর তার সাধ্যাতীত বোঝা চাপান না।’ -সুরা বাকারা : ২৮৬

এ সম্পর্কিত আরও খবর