শীতে বিপন্ন অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ান

বিশেষ নিবন্ধ, ইসলাম

আশিকুল হামিদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-09-01 20:07:03

দেশে হঠাৎ শীত বেড়েছে। শীতের কারণে নানা ধরনের রোগের প্রকোপ বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের উদ্ধৃতি দিয়ে ২৬ ডিসেম্বর (২০২১) বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ১ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে রাজধানীসহ সারাদেশে দুই লাখ ৪৭ হাজার ২৭৩ জন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সেই সঙ্গে রয়েছে করোনার নতুন ভেরিয়্যান্ট ওমিক্রনসহ আরও কিছু রোগ।

এরই মধ্যে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, শৈত্যপ্রবাহ এবং শীতের তীব্রতা কিছুটা কমলেও কয়েকদিনের মধ্যে নতুন পর্যায়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবারের প্রতিটি শৈত্য প্রবাহ তিন থেকে চারদিন পর্যন্ত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে বাড়তে পারে শীতের নানা রোগ-বালাই।

শীতের দিনে শীত বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক হলেও আমরা উদ্বিগ্ন আসলে গরীব এবং সাধারণ মানুষের জন্য। কারণ, মূলত অর্থকষ্টসহ দারিদ্র্যের কারণে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের পক্ষেই শাল, উলের সোয়েটার এবং অন্যান্য গরম কাপড় কেনা সম্ভব নয়। তার ওপর বিগত প্রায় দু’বছর ধরে করোনার কারণে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক বেশি খারাপ হয়ে গেছে। ফলে শীতে তাদের কষ্ট সীমা ছাড়িয়ে যাবে- ইতিমধ্যে যেতেও শুরু করেছে।

বেশ কয়েক বছর ধরে আবহাওয়ায়ও যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটেছে। ১৯৭০-এর দশক পর্যন্তও একটা সময় ছিল, যখন পৌষ আসতে না আসতেই প্রবল শীতের কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবন অচল হয়ে পড়তো। মাঘ এলে তো কথাই ছিল না। মাঘের শীতে তখন আসলেও কম্বল কাঁপতো। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে আবহাওয়ার আচরণে অকল্পনীয় পরিবর্তন ঘটেছে। চলতি বছরের শীতের কথাই ধরা যাক। এবার পৌষের শুরু থেকে শীত পড়তে শুরু করলেও শীতের তীব্রতা কিন্তু তেমন অনুভূত হয়নি। মানুষকে অতীতের মতো কষ্ট করতে হয়নি। ব্যতিক্রমও অবশ্য ছিল। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এবং কুড়িগ্রাম ও চুয়াডাঙ্গাসহ আরও কিছু এলাকায় প্রচন্ড শীতে জনজীবন প্রায় অচল হয়ে পড়ে। এমন অবস্থার পেছনে প্রধান কারণ ছিল তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। এ সময় কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছিল দেশের অধিকাংশ অঞ্চল। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, জানুয়ারি মাসে দফায় দফায় শৈত্যপ্রবাহ চলবে। এর অর্থ, পৌষ পেরিয়ে মাঘ মাসেরও বেশিরভাগ সময় দেশে তীব্র শীত থাকবে।

প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে স্বাভাবিক হলেও এবারের শীতে সাধারণ মানুষের জীবনে এরই মধ্যে নানামুখী অসুখ ও বিপদ চেপে বসেছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, সর্দি-কাশি তো হচ্ছেই, একই সঙ্গে ডায়ারিয়া, নিউমোনিয়া ও হাঁপানির মতো রোগ-বালাইও ছড়িয়ে পড়েছে, যেগুলো সাধারণত শীতের সঙ্গে এসে থাকে। প্রচন্ড শ্বাসকষ্টেও ভুগছে অনেকে। পাশাপাশি রয়েছে শীতবস্ত্রের অভাব। খুব কম সংখ্যক মানুষের পক্ষেই সোয়েটার, জ্যাকেট, মাফলার ও শাল বা চাদর জাতীয় শীতবস্ত্র কেনা বা যোগাড় করা সম্ভব হয়েছে বা হচ্ছে। তারা লেপ-কম্বলও কিনতে বা যোগাড় করতে সক্ষম হয়নি। ফলে অসম্ভব কষ্টে দিন ও রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। রাজধানীর মতো বড় বড় শহরে-নগরে যারা দালান বা পাকা ভবনে বসবাস করেন, যাদের যখন-তখন যে কোনো ধরনের শীতবস্ত্র এবং লেপ-কম্বল কেনার সামর্থ্য রয়েছে, তাদের পক্ষে বিশেষ করে গ্রামের মানুষের কষ্টের কথা সহজে কল্পনা করতে পারার কথা নয়।

শুধু গ্রামের কথাই নয়, বিভিন্ন শহরে যে মেহনতী শ্রমিক ও গরীব মানুষের বসবাস, তারাও রয়েছে প্রচন্ড কষ্টের মধ্যে। প্রয়োজনীয় শীত বস্ত্র তো নেই-ই, সেই সঙ্গে তারাই আবার বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শীতজনিত অসুখ-বিসুখে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, প্রথমত তাদের খুব কম সংখ্যকই সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছে। বেশিরভাগ হাসপাতালে সিট পাওয়া দূরে থাকুক, মেঝেতেও জায়গা মিলছে না এমনকি গুরুতর অসুস্থ শিশু ও বৃদ্ধদের। এর পর রয়েছে ওষুধ পাওয়ার পালা। খুব কম সরকারি হাসপাতালেই প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। বিনামূল্যে পাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না, ন্যায্যমূল্যেও ওষুধ পাচ্ছে না মানুষ। ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরের দোকান থেকে- যাদের সঙ্গে হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সসহ কর্মচারীদের বিশেষ লেনদেনের সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অর্থাৎ প্রচন্ড শীতের মধ্যেও চিকিৎসা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গরীব তথা সাধারণ মানুষেরা। এমন অবস্থা চলছে সারা দেশেই।

শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে অনেকের ভরসা আগুন

 

বলা দরকার, শীতের কারণে সৃষ্ট চরম বিপদের মধ্যে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ন্যক্কারজনক ছিনিমিনি কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সরকারের উচিত বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোর অনিয়ম ও বেআইনি কার্যকলাপের ব্যাপারে দ্রুত তৎপর হয়ে ওঠা। শিশু ও বৃদ্ধ নির্বিশেষে অসুস্থ সব মানুষ যাতে যাওয়া মাত্র ভর্তি ও চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ পায় তার আয়োজন নিশ্চিত করা। সরকারকে একইসঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ ওষুধও সরবরাহ করতে হবে, যাতে বিপন্ন কোনো মানুষকেই বেশি দাম দিয়ে বাইরের দোকান থেকে ওষুধ কিনতে না হয়। ওষুধ ও চিকিৎসা নিয়ে যারা দুর্নীতি করছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

শীতবস্ত্র বিতরণের ব্যাপারেও সরকারের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। সরকার চাইলে সমাজের বিত্তবান মানুষদের কাছ থেকে সোয়েটার, জ্যাকেট, কম্বল, মাফলার এবং শাল বা চাদর ও কম্বল জাতীয় শীতবস্ত্র সংগ্রহ করা সহজেই সম্ভব হতে পারে। এজন্য দরকার আন্তরিকতার সঙ্গে উদ্যোগ নেওয়া। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, এনজিও এবং সামাজিক সংগঠনেরও উচিত শীতে কষ্ট পাওয়া মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে আসা। সেটা আমাদের জাতীয় দায়িত্বও বটে।

আমরা আশা করি, শীতের তীব্রতা এবং মানুষের কষ্ট আরও বাড়ার আগেই সরকারসহ সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন এবং এনজিও মানুষের কষ্ট কমানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে উঠবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর