প্রতিটি মানুষ তার পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে- এটাই ইসলামের শিক্ষা। একটি সুখি-সমৃদ্ধ পরিবারের যাত্রা শুরু হয় বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু বর্তমান পারিবারিক অশান্তি বেড়েই চলেছে আর প্রতিনিয়ত ভেঙে যাচ্ছে সুখের সংসার। আমরা দেখতে পাই, বর্তমানে অনেক পরিবারই ধ্বংস হচ্ছে কেবলমাত্র পরকীয়ার জেরে। বিবাহবহির্ভূত এমন অবৈধ সম্পর্কের কারণে সংসারে অশান্তি-ভাঙন এমনকি জঘন্য হত্যাকান্ডের মতো ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। পরকীয়ায় এমনভাবে আশক্ত হচ্ছে যে গর্ভধারী মা তার নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করতেও দ্বিধা করছে না।
বিবাহবহির্ভূত অবৈধ সম্পর্ক থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হলে ইসলামি শিক্ষার ওপর আমল করার বিকল্প নেই। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে নারীদের উদ্দেশ্য করে ঘোষণা করেছেন, ‘(হে রাসুল! আপনি) ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। সাধারণতঃ প্রকাশমান ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বুকের ওপরে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, বাবা, শ্বশুর, ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, স্ত্রীলোক অধিকারভূক্ত বাদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও এমন বালক-যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতিত অন্য কারো সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। এমনকি তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা কর; যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ -সুরা নুর : ৩১
কোরআনে কারিমে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। যার ফলে সে ব্যক্তির কুবাসনা সৃষ্টি হয়, যার অন্তরে আসক্তি আছে। তোমরা উত্তম (সংযত) কথাবার্তা বলো।’ -সুরা আহজাব : ৩২
পুরুষদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘(হে রাসুল! আপনি) মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহতায়ালা সে ব্যাপারে খবর রাখেন।’ -সুরা নুর : ৩০
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা সেই মহিলাদের নিকট গমন করো না যাদের স্বামীরা বিদেশে আছে। কারণ, শয়তান তোমাদের রক্তশিরায় প্রবাহিত হয়।’ -তিরমিজি
নবী কারিম (সা.) আরও ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন কোনো (বেগানা) নারীর সঙ্গে নির্জনে না বসে। কেননা শয়তান তাদের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে যায়। (সে তাদের কুমন্ত্রণা দেয়)।’ -তিরমিজি
দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো- স্বামীর জন্য স্ত্রী এবং স্ত্রীর জন্য স্বামী। তারা উভয়ে সুন্দর, সুখের নীড় এবং সভ্যতা নির্মাণে ভূমিকা রাখেন। পারিবারিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক হবে শ্রদ্ধাশীল, অনুগত ও ভালোবাসাপূর্ণ। পারস্পরিক প্রেম-ভালোবাসা বিশ্বাস পারিবারিক বন্ধনকে অটুট রাখে এবং পারস্পারিক অনাস্থা, সন্দেহ-সংশয়, অবিশ্বাস, আনুগত্যহীনতা সর্বোপরি অবাধ স্বাধীনতা পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংস করে।
হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হবো।’ –সহিহ বোখারি
সন্তানকে সুন্দর করে গড়তে বাবা-মায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ আর সন্তান যদি পারিবারিক অশান্তির মধ্যে বড় হয়, এটি তার মনের ওপর ভীষণ চাপ ফেলে। এর প্রভাব পড়ে তার পরবর্তী জীবনেও। শিশুদের বিকাশের জন্য সুন্দর পারিবারিক পরিবেশ জরুরি।
আমরা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চাই তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই অবৈধ সম্পর্ক পরিত্যাগ করতে হবে। পরিবার-পরিজন ও সন্তান-সন্তুতির মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও অবৈধ প্রেম ভালোবাসা ত্যাগ করে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষার ওপর থেকে জীবন পরিচালনার চেষ্টা করি।