ঈমান আনার পর একজন মুমিনকে পাশাপাশি জীবন চলার পথে বেশ কিছু বিষয় ও বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হয়। তবেই তার জীবন হয় সুন্দর, আর এসব গুণের কারণে একজন সাধারণ মুমিন প্রকৃত ঈমানদার ও আল্লাহর প্রিয় হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে। হাদিসের আলোকে মুমিনের এমনই ৭টি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো।
পারস্পরিক আন্তরিকতা ও হৃদ্যতা : শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পরস্পর ভালোবাসা ও অন্তরঙ্গতার সম্পর্ক তৈরি করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন সবার আপন হয়, অন্তরঙ্গ হয়। যে অন্তরঙ্গ হয় না এবং যার সঙ্গে অন্তরঙ্গ হওয়া যায় না, তার মাঝে কোনো কল্যাণ নেই।’ -মুসনাদে আহমাদ : ৯১৯৮
সৌজন্যমূলক আচরণ : মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে নানা রকম মানুষের সঙ্গে চলতে হয়। মানুষের সঙ্গে কেমন আচরণ হবে? হাদিসে এসেছে, ‘যে মুসলিম মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে এবং তাদের দেওয়া যন্ত্রণায় ধৈর্য ধারণ করে সে এমন মুসলিমের চেয়ে উত্তম যে মানুষের সঙ্গে মেলামেশাও করে না এবং তাদের দেওয়া যন্ত্রণায় ধৈর্যও ধরে না।’ -জামে তিরমিজি : ২৫০৭
মানসিক শক্তি : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শক্তিধর ঈমানদার দুর্বল ঈমানদারের তুলনায় আল্লাহর কাছে উত্তম ও অতীব পছন্দনীয়। তবে প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ নিহিত আছে, যাতে তোমার উপকার রয়েছে তা অর্জনে তুমি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করো। তুমি অক্ষম হয়ে যেয়ো না...।’ -সহিহ মুসলিম : ৬৬৬৭
সহজ-সরল : এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) মুমিনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এভাবে তুলে ধরেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি চিন্তাশীল, গম্ভীর ও ভদ্র হয়ে থাকে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি প্রতারক, ধোঁকাবাজ, কৃপণ, নীচ ও অসভ্য হয়ে থাকে।’ -জামে তিরমিজি : ১৯৬৪
ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা : পৃথিবীর জীবনে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা সবার জীবনেই আসে। কিন্তু এই দুঃখ-সুখের মাধ্যমেও যে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সব কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শোকরগুজার করে আর অসচ্ছলতা বা দুঃখ-মুসিবতে আক্রান্ত হলে ধৈর্য ধারণ করে, প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর।’ -সহিহ মুসলিম : ৭৩৯০
অন্যায়ের প্রতিবাদকারী : মুমিনরা কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো অন্যায় হতে দেখে, সে যেন সম্ভব হলে তা হাত দ্বারা রুখে দেয়। আর এটা সম্ভব না হলে প্রতিবাদী ভাষা দিয়ে তা প্রতিহত করে। আর তা-ও না পারলে সে যেন ওই অপকর্মকে হৃদয় দ্বারা বন্ধ করার পরিকল্পনা করে (মনে মনে ঘৃণা করে), এটি দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক।’ -জামে তিরমিজি : ২১৭২
মুমিন যা ইচ্ছা তা-ই করে না : আল্লাহর প্রিয় মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য হলো তারা দুনিয়াকে আপন মনে করে না; বরং সামান্য সময়ের অবস্থানই মনে করে। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, ‘দুনিয়া মুমিনের কারাগার আর কাফেরের জান্নাত।’ -সহিহ মুসলিম : ২৯৫৬