সৌদি আরবের মরু প্রান্তরে হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ হেঁটেছেন বাংলাদেশ থেকে পায়ে হেঁটে হজ করতে যাওয়া আলিফ মাহমুদ আদিব। বর্তমানে তিনি তায়েফ ও মক্কার মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান করছেন। আর মাত্র ত্রিশ কিলোমিটার দূরেই তার স্বপ্নের কাবা।
পায়ে হেঁটে পৃথিবীর ছয় মহাদেশ ভ্রমণের প্রথম ধাপ হিসেবে এবং পদব্রজে বিশ্বভ্রমণ বরকতময় করতে পবিত্র হজব্রত পালনের বাসনায় প্রায় নয় মাস আগে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করেন যুবক আদিব। অসম্ভবকে সম্ভব করে ইতোমধ্যে হেঁটেছেন সাত হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ। ভারত, পাকিস্তান, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবে পাড়ি দিয়েছেন শহর নগর বন্দর গ্রামীণ জনপদ পাহাড় মরুভূমি। প্রতিটি দেশেই স্থানীয় জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তিনি, পেয়েছেন স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতা।
ইরাক ও কুয়েত হয়ে সৌদিতে প্রবেশের প্রাথমিক রুট ছিলো আলিফ মাহমুদ আদিবের। কিন্তু মরুভূমিতে সামরিক অস্থিরতা এবং ভিসা প্রাপ্তির অনিশ্চয়তায় ইরানের বন্দর আব্বাস থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পর্যন্ত সামান্য পানিপথ ফেরিতে পার হতে বাধ্য হন তিনি। আরব দেশের মহাসড়ক পাশে রেখে প্রতিদিন পঞ্চাশ কিলোমিটার পর্যন্ত হাঁটার সময় শ্রমজীবী প্রবাসী বাংলাদেশিরা ছুটে এসেছেন তাকে এক নজর দেখতে, সেলফিতে ধরে রাখতে, সামান্য একটু খাবার সঙ্গে দিয়ে দিতে। শত সহস্র কিলোমিটার পথে এক পেট্রোল পাম্প থেকে আরেক পেট্রোল পাম্প আদিবের কাঁধের ব্যাগ পৌঁছে দিয়েছেন তারা।
ঘটনাবহুল সফরে ইরানের মাটিতে দেখা হয় ছিনতাইকারীর সঙ্গে। আবুধাবিতে এবং রিয়াদে উভয় বাংলাদেশ দূতাবাসে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয় দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গেও। রিয়াদ-মক্কার মাঝামাঝি অবস্থানে ভয়ংকর মরুঝড়ের কবলে পড়ে গুহায় আশ্রয় নিয়ে জানে বাঁচেন অস্বাভাবিক সাহসী আদিব, মরুভূমিতে ঠেকিয়েছেন হিংস্র কুকুরের আক্রমণ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে ভারত পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ ভক্ত অনুরাগী ফলোয়ার আলিফ মাহমুদের। তাদের অনুরোধে প্রায়শই তিনি লাইভে এসেছেন এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে হাঁটার সময়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আশা করা যায়, আগামীকালই পবিত্র নগরী মক্কায় পা রাখবেন আদিব।
নয় মাসের তার ঐতিহাসিক এই মিশন আনন্দে ভরে দিতে বাংলাদেশ থেকে এমন একজন ছুটে আসছেন মক্কায় যিনি নয় মাস পেটে নিয়েছেন তাকে। সন্তানকে বুকে নিতে আদিবের মা এখন সৌদি আরবে। আলিফ মক্কায় পৌঁছার পর রমজানেই মা-ছেলে একসঙ্গে পবিত্র উমরা পালন করবেন।