বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৮ লাখের বেশি মানুষ এ বছর পবিত্র হজ পালন করেছেন, যাদের অধিকাংশই প্রথমবারের মতো এই সুযোগে ধন্য হয়েছেন। অন্যদিকে করোনা পরবর্তী সময়ে এবার হজযাত্রীদের বয়সের বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনেক বয়স্ক মানুষ হজের সুযোগ পেয়েছেন।
সুষ্ঠুভাবে হজ শেষ হলেও হজ-পরবর্তী সময়ে হাজিদের মৃত্যুর খবর থামছে না। হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনের পাঁচ দিনসহ হজ-পরবর্তী সময়ে এবার ১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এখনও অনেকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, সেখানেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। হজে এত মানুষের মৃত্যু কেন হলো- এ বিষয়ে এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি, আরও সৌদি কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেয়নি।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, চলমান তাপপ্রবাহ ও অসহনীয় গরমে এবার এত হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সৌদি সরকার বারবার সতর্ক করেছে, হাজিরা যেন রোদে চলাচল না করেন- তার পরও অনেকে বাসের বদলে মিনা-আরাফাত-মুজদালিফা-মিনা ও মক্কায় হেঁটে চলাচল করে অসুস্থ হয়ে গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টকে আহমদ বাহা নামের এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘হতাহতের সংখ্যা কেমন সেটা জানি না। তবে গরমের কারণে আমরা শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারছিলাম না।’
৩৭ বছর বয়সী আহমদ বাহা মিসরের নাগরিক। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার বাহা সৌদি আরবে থাকেন। এবার তিনি হজে অংশ নিয়েছিলেন।
বাহা জানিয়েছেন, মাশায়েরে মোকাদ্দাসায় ‘ভয়ঙ্কর দৃশ্য’ দেখেছি। বাস থাকা সত্ত্বেও মিনার তাঁবু থেকে অনেকে হেঁটে আরাফাতে রওয়ানা দিয়ে বিপদ ডেকে আনেন। পথে রোদের তাপ আর তীব্র গরমে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। কেউ কাউকে সাহায্য করবে- সেই অবস্থা খুব একটা ছিলো না। এরপর একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স অব্যাহতভাবে চলছিল। ডান-বাম সবদিক থেকে অসুস্থ মানুষকে তুলে নিচ্ছিল। ক্লান্ত মানুষ রাস্তায় বিশ্রামের জন্য বসেছিল। কিন্তু গরমে সেটাও সম্ভব হয়নি। আমি বাস থেকে একজনকে ঢলে পড়ে যেতে দেখেছি। এরপর তিনি আর নড়াচড়া করতে পারছিলেন না।’
এবার হজের আনুষ্ঠানিকতা ১৪ জুন শুরু হয়ে পরবর্তী পাঁচ দিন পর্যন্ত চলেছে। এই সময়টায় মক্কায় অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বিরাজ করছিল। একটা সময় সেখানে তাপমাত্রা উঠেছিল ৫১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সৌদি সরকার বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে আগত হজযাত্রীদের সম্ভাব্য সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করে। বছরের পর বছর ধরে সৌদি সরকার হজ মৌসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘাটতি ও ত্রুটি-বিচ্যুতি মূল্যায়ন করে পরবর্তী বছর কীভাবে আরও উন্নত সেবা দেওয়া যায়- তার ব্যবস্থা নেয়।
এবারও হজ শেষ হওয়ার পর পর মক্কায় হজ মন্ত্রণালয় ১৪ জিলহজ মূল্যায়ন সভার আয়োজন করে। ওই সভায় ওঠে আসে, মাত্রাতিরিক্ত গরমের সময় হাজিদের চলাচলের বিষয়টি। এ কারণে প্রচুর হজযাত্রী অসুস্থ হয়ে যান। এটাই হজযাত্রীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ।
আরও পড়ুন
এ বছর হজ মৌসুমে মাত্রাতিরিক্ত গরম ছিল। এ ব্যাপারে আবহাওয়া দফতর বারবার হজযাত্রীদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে আসছিল। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে ক্রমাগত তাপমাত্রা এবং আবহাওয়ার সতর্কতা বিজ্ঞপ্তি জারি করে হজযাত্রীদের গরমের কারণে ছাতা ব্যবহার করতে বলেছিল। আরও পরামর্শ দিয়েছিল দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করতে।
আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান এবং শারীরিকভাবে সুস্থ প্রত্যেক মুসলমানের ওপর হজ ফরজ। হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনের স্থানগুলো হলো- মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতের ময়দান। এই তিন জায়গার আয়তন সীমিত হওয়ায় ভিড়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রশাসনিক ও অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাছাড়া একই সময়ে লাখ লাখ মানুষকে এক জায়গায় পরিচালনা করা খুব কঠিন।