দেশে ফিরে হাজিদের করণীয়

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দেশে ফিরে হাজিদের করণীয়, ছবি: সংগৃহীত

দেশে ফিরে হাজিদের করণীয়, ছবি: সংগৃহীত

হজের মৌসুম শেষ হয়েছে। হজ পালন শেষে আল্লাহর বান্দারা দেশে ফিরে আসছেন। আমাদের জন্য এটা খুবই বরকতের বিষয় হলো, বাংলাদেশ থেকে আল্লাহর বান্দারা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে আল্লাহর ঘরের দিকে যান, এরপর আল্লাহর বিধান পালন করে প্রত্যাবর্তন করেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘জনপদের অধিবাসীরা যদি জানত তাদের ওপর হজ আদায়কারীদের কী হক, যখন তারা তাদের কাছে ফিরে আসে, তাহলে তারা তাদের সওয়ারিগুলোকেও চুমু খেত! তারা তো সব মানুষের মাঝে আল্লাহর প্রতিনিধি দল।’ -শোয়াবুল ঈমান, বায়হাকি: ৮/৫৩

হজ ইসলামের অন্যতম ইবাদত। তবে তা আদায়ের সুযোগ-সামর্থ্য কেবল মুষ্টিমেয় লোকেরই হয়ে থাকে। তাই যারা পবিত্র হজ সম্পাদনের সুযোগ পান, হজ সম্পাদন শেষে দেশে নিজ নিজ দেশে ফেরার হজ পরবর্তী জীবন শুদ্ধভাবে পরিচালিত করা উচিত।

বিজ্ঞাপন

অভিজ্ঞ আলেমরা বলেন, হজ থেকে ফিরে হাজিদের কয়েকটি তাৎক্ষণিক করণীয় রয়েছে। সেগুলো হলো-

এক. হজ থেকে ফিরে এসে মসজিদে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত। হজরত কাব বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো সফর থেকে ফিরে আসতেন, তখন মসজিদে (নফল) নামাজ আদায় করতেন। -সহিহ বোখারি

দুই. কৃতজ্ঞতাস্বরূপ গরিব-মিসকিন ও আত্মীয়স্বজনের জন্য পানাহারের আয়োজন করা যায়। ফিকহের পরিভাষায় এই খাবারকে ‘নকিয়া’ বলা হয়। হজরত জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় এসেছেন, তখন একটি গরু জবাইয়ের নির্দেশ দেন। জবাইয়ের পর সাহাবিরা তা থেকে আহার করেছেন। -সহিহ বোখারি

তিন. ঘরে ফিরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা মোস্তাহাব। হাদিসে এসেছে, ‘যখন তুমি ঘর থেকে বের হবে, তখন দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। সেই নামাজ তোমাকে ঘরের বাইরের বিপদাপদ থেকে হেফাজত করবে। আর যখন ঘরে ফিরবে, তখনো দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। সেই নামাজ তোমাকে ঘরের অভ্যন্তরীণ বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করবে।’ -মুসনাদে বাজ্জার

চার. জমজমের পানি লোকজনকে পান করানো মোস্তাহাব। অসুস্থ রোগীদের গায়ে ব্যবহার করাও বৈধ। -মুয়াল্লিমুল হুজ্জাজ : ৩০৩

হজরত আয়েশা (রা.) জমজমের পানি সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন এবং বলতেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জমজমের পানি সঙ্গে নিয়ে যেতেন।’ -জামে তিরমিজি

পাঁচ. আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে হাদিয়া-তোহফা দেওয়া সুন্নত। তবে হাজিদের হাদিয়া দেওয়া এবং তাদের কাছ থেকে হাদিয়া গ্রহণ করা এখন প্রথায় পরিণত হয়েছে। তাই তা বর্জন করা উচিত। -আপকে মাসায়েল : ৪/ ১৬১

হজের সফরে যেমন নামাজের গুরুত্ব, তাকওয়া ও খোদাভীতি অন্তরে ছিল, দেশে ফিরেও যেন সেসব অটুট থাকে- সেদিকে খেয়াল রাখা আবশ্যক। এক কথায়, সব রকমের গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা দরকার।

আরও পড়ুন

সন্তানের কাঁধে চড়ে মায়ের হজ

হজ শেষে নবীর শহর মদিনায় যাচ্ছেন হাজিরা

যেহেতু আমাদের পরিবেশে গোনাহ থেকে বাঁচা কঠিন, তাই এই পরিবেশে তাকওয়া অবলম্বনের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো- আল্লাহওয়ালাদের সাহচর্যে থাকা। আল্লাহওয়ালাদের সঙ্গে থাকা, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়া, তাদের কথা মান্য করা ইত্যাদির মাধ্যমে গোনাহ থেকে সহজেই বেঁচে থাকা সম্ভব। কেননা, মানুষ স্বভাবগতভাবেই পরিবেশের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে। ফলে গোনাহের পরিবেশ বর্জন করে নেক ও সৎ লোকদের পরিবেশে নিজেকে অভ্যস্ত করে বাকি জীবন গোনাহমুক্তভাবে কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা অপরিহার্য।

এ ছাড়া নিম্নোক্ত আমলগুলো নিয়মিতভাবে করে যাওয়া-

১. প্রতিদিন নিয়মিতভাবে কিছু পরিমাণ কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত করা।
২. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে তাকবিরে উলার সঙ্গে আদায়ের চেষ্টা করা।
৩. প্রতিদিনের ফরজ ও সুন্নত নামাজের পাশাপাশি কিছু পরিমাণ নফল নামাজেরও অভ্যাস গড়ে তোলা।
৪. প্রত্যেহ তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে চেষ্টা করা।
৫. প্রতিদিন তওবা-ইস্তেগফার, দরুদ শরিফ ও অন্যান্য দোয়া-জিকির ইত্যাদি পাঠ করা।