পবিত্র কাবাঘরের চাবিরক্ষক ও সিনিয়র তত্ত্বাবধায় ড. শায়খ সালেহ বিন জয়নুল আবেদিন আল-শায়বি ইন্তেকাল করেছেন। তিনি ছিলেন মক্কা বিজয়ের পর থেকে পবিত্র কাবাঘরের ৭৭তম চাবিরক্ষক।
শুক্রবার (২১ জুন) দিবাগত রাতে মক্কায় মারা যান তিনি। পরদিন শনিবার (২২ জুন) ফজরের নামাজের পর পবিত্র মসজিদে হারামে জানাজার পর তাকে মক্কার প্রাচীন কবরস্থান জান্নাতুল মুয়াল্লায় দাফন করা হয়। যেখানে হজরত খাদিজা (রা.)-এর কবর রয়েছে।
শায়খ সালেহ আল-শায়বির দায়িত্বের ছিল, পবত্রি কাবাঘরের দরজা খোলা ও বন্ধ করা, ধৌত করা, কাবাঘরের গিলাফ (কিসওয়া) পরিবর্তন কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করাসহ মসজিদে আগত বিদেশি অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো।
এদিকে পবিত্র কাবাঘরের ১১০তম চাবি বাহক কে হতে যাচ্ছেন তা নিয়ে সৌদি সংবাদমাধ্যমে কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। তাদের একজন হলেন আবদুর রহমান এবং অন্যজন হলেন আবদুল মালিক আল-শায়বি। এক্ষেত্রে বংশের প্রবীণতম ব্যক্তির পরামর্শ নেওয়া হয়। অবশ্য নিয়োগের চূড়ান্ত বিষয়টি সৌদি রাজকীয় আদালতের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।
গত পাঁচ বছর ধরে সালেহ আল-শায়বির সহকারী হিসেবে তার ছেলে আবদুর রহমান কাজ করেন। এরপর তার চাচাতো ভাই আবদুল মালিক আল-শায়বি সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সালেহ আল-শায়বির ছেলে আবদুর রহমান জানান, তার পিতা চাইতেন, পবিত্র কাবাঘরের চাবি ও তত্ত্বাবধান তার (ছেলে) কাছে হোক। তবে তার (পিতার) ইচ্ছাকে সম্মান জানানো না হলে পবিত্র এ ঘরের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব তার চাচা আবদুল ওয়াহাব আল-শায়বির হাতে যাবে।
অন্যদিকে শায়খ সালেহ আল-শায়বির চাচাতো ভাই শায়খ নিজার আল-শাইবি বলেছেন, আজকের দিনটি আমাদের পরিবারের জন্য দুঃখের দিন। রীতি অনুযায়ী পবিত্র কাবার চাবি কার হাতে যাবে, এটা আমাদের বংশের বড়রা নির্বাচিত করবেন। এখন পর্যন্ত এটা ঘোষণা করা হয়নি, রাজকীয় আদালত থেকেই এর ঘোষণা আসবে।
আবদুর রহমান বলেন, ‘বাবাকে বিদায় জানানো জীবনের সবচেয়ে কঠিন ও দুঃখজনক মুহূর্তগুলোর মধ্যে একটি। কিছুদিন আমার বাবা অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তবে তার ধৈর্যশক্তি ছিল খুবই প্রবল। তিনি ছিলেন দৃঢ় মনোবলের অধিকারী। আমার পরিবার এমন একজন মানুষের জন্য আল্লাহর ইচ্ছা মেনে নিয়েছে যিনি সর্বদা সবার কাছাকাছি ছিলেন এবং পরিবারের সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।’
ড. সালেহ আল-শায়বি ১৩৬৬ হিজরি সালে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। ড. সালেহ মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে পিএইচডি গ্রহণ করেন। এরপর দুই দশকের বেশি সময় সেখানে শিক্ষকতা করেন। পাণ্ডিত্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসার জন্য তিনি পরিচিত। বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ তাকে সৌদি শুরা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করেন।
আরও পড়ুন
ইশারা ও চাহনি যেখানে ভেঙে দেয় ভাষার বাধা
১৯৮০ সালে তার চাচা শায়খ আবদুল কাদির আল-শায়বির সহকারী হয়ে পবিত্র কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে তার চাচার মৃত্যুর পর তিনি প্রধান চাবি রক্ষক হিসবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন থেকে আমৃত্যু তিনি এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এ সময়ে তিনি শতাধিক বার পবিত্র কাবাঘর পরিচ্ছন্নতা ও ধৌত কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মক্কা বিজয়কাল থেকে ৭৭তম এবং তার পূর্বপুরুষ কুসাই বিন কিলাবের যুগ থেকে ১০৯তম চাবিরক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ড. সালেহ আল-শায়বি। তিনি বিখ্যাত সাহাবি উসমান ইবনে তালহা (রা.)-এর বংশধর ছিলেন। যার ব্যাপারে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, ‘হে তালহার বংশধর, তোমরা এ চাবি গ্রহণ করো। তোমাদের কাছে তা থাকবে। অত্যাচারি ছাড়া কেউ তা ছিনিয়ে নেবে না।’
মূলত জাহেলি যুগ থেকেই কাবাঘরের চাবি শায়বা গোত্রের কাছে থাকত। অষ্টম হিজরি তথা ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে মক্কা বিজয়ের দিন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই ওই গোত্রের হজরত উসমান ইবনে তালহার (রা.) কাছে চাবি হস্তান্তর করে তাকে সম্মানিত করেন। এরপর থেকে তার বংশধরেরা ওই চাবি সংরক্ষণ করছেন।
বর্তমান সময়ে তাদের কাছ থেকে চাবি নিয়েই বিভিন্ন সময় সৌদি আরবের বাদশাহ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ পবিত্র কাবা ঘরে প্রবেশ করে থাকেন।