কক্সবাজার সদর উপজেলার খরুলিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে টানা ৩৬ বছর ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর মাওলানা কারি নুরুল হককে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে রাজকীয় বিদায় জানিয়েছে খরুলিয়ার গ্রামবাসী, প্রাক্তন ছাত্র পরিষদসহ মসজিদ পরিচালনা কমিটি।
মাওলানা নুরুল হককে গ্রামের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয় ফুল সজ্জিত গাড়িতে, এ সময় মোটরসাইকেলের বহর গাড়ির সঙ্গে ছিল। জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অকৃত্রিম ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় নগদ সাড়ে ৮ লাখ টাকা, সম্মাননা ও অসংখ্য উপহার।
বিদায় বেলায় একজন ইমামকে সম্মানিত করার এমন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করায় প্রশংসায় ভাসছেন প্রাক্তন ছাত্র পরিষদসহ আয়োজকরা।
শনিবার (১৩ জুলাই) খরুলিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মাঠে অবসরপ্রাপ্ত ইমাম মাওলানা কারি নুরুল হকের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। সংবর্ধিত ইমাম মাওলানা নুরুল হক পেকুয়া উপজেলার টৈইটং ইউনিয়নের জালিয়ারচাং গ্রামের বাসিন্দা।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালের দিকে মাওলানা নুরুল হককে মসজিদটিতে ইমামতির দায়িত্ব দেন। এরপর কেটে যায় প্রায় ৩৬টি বছর। কর্মস্থল এ মসজিদটিতে তিনি তার উদ্যোগে এলাকাবাসীদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা সংস্কারমূলক কাজ করেন। পাশাপাশি শিক্ষকতা করেছেন খরুলিয়া তালিমুল কোরআন মাদরাসায়। এছাড়া খরুলিয়া নূরানী এন্ড ক্যাডেট মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে অনবদ্য ভূমিকা রাখেন তিনি। বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন অতিবাহিত করা প্রিয় ইমাম প্রিয় শিক্ষককে স্মরণীয় বিদায় জানাতে গ্রামবাসীসহ তার প্রাক্তন ছাত্ররা ওই মসজিদে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
স্থানীয়রা বলেন, মাওলানা নুরুল হক একজন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি তার জ্ঞান, দক্ষতা ও নীতিবোধ দিয়ে এলাকার মানুষের মনে দাগ রেখে গেছেন।
মসজিদ পরিচালনায় কমিটির সভাপতি মাস্টার হাবীব আহমদের সভাপতিত্বে ও ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. মিজানুল কবিরের পরিচালনায় শুরুতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন পেকুয়া এমইউ ফাজিল মাদরাসার আরবী প্রভাষক মাওলানা আজিজুল হক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার হাশেমিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা এম. আজিজুল হক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন খরুলিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ হাসান।
সংবর্ধিত বিদায়ী ইমাম মাওলানা নুরুল হক আবেগাপ্লুত হয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, ১৯৮৯ সাল থেকে এই মসজিদে ইমামতি করে আসছি। ৩৬ বছরের বিদায় বেলাতে এত ভালোবাসা ও সম্মান দেওয়ায় আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। বিদায়বেলায় তিনি কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন গড়া এবং ঈমান ও আমলের ওপর সবাইকে জীবন পরিচালিত করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাওলানা এম. আজিজুল হক বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠান সবার চক্ষু খোলে দিয়েছে। সব মসজিদের দায়িত্বশীলদের এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করতে সবাইকে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানান।