বন্যা কবলিত বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর পাওয়া গেছে যে, হাতে নগদ টাকা থাকলেও ওই সব এলাকার দোকানপাট এবং হাটবাজারগুলোও পানিতে ডুবে আছে। ফলে কেনার মতো শুকনা খাবারেরও সংকট চলছে। এমতাবস্থায় আমাদের উচিত, আমাদের ভাইদের সহায়তার জন্য নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসা।
যেহেতু বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে খাদ্যসামগ্রী (চাল, ডাল, তেল, শুকনা খাবার), বিশুদ্ধ খাবার পানি, ওষুধপত্র ইত্যাদির সংকট আছে, তাই সেসব এলাকায় সাধ্যমতো এগুলো পাঠানোর চেষ্টা করা।
হাদিস শরিফে মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করাকে উত্তম ইসলাম বলা হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বলেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে এবং চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম দেবে। -সহিহ বোখারি : ১২
সেই সঙ্গে চিকিৎসাসেবার কার্যক্রম চালানো। মনে রাখতে হবে, ইখলাসের (একনিষ্ঠভাবে) সঙ্গে মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়েও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলমান তার কোনো (অসুস্থ) মুসলিম ভাইকে দেখতে গেলে সে (যতক্ষণ সেখানে থাকে ততক্ষণ) যেন জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে। -জামে তিরমিজি : ৯৬৭
আর কঠিন বিপদে থাকা মানুষদের চিকিৎসাসেবা দিলে আরো বেশি সওয়াবের আশা করা যায়- ইনশাআল্লাহ।
এসব কাজের সঙ্গে পুনর্বাসন কার্যক্রম হাতে নেওয়া। বন্যা যখন চলে যাবে, তখন আমাদের দায়িত্ব হবে, বন্যায় নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মানুষকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা। তাদের ঘুরে দাঁড়ানোয় সহযোগিতা করে, একটি সুন্দর ও স্বাবলম্বী সমাজ গঠনে এগিয়ে আসা।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানবদেহের মতো। যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন তার সমস্ত দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা।’ -সহিহ মুসলিম : ৬৪৮০
আমাদের ভাইদের বিপদে অনাহারে রেখে শান্তিতে ঘুমানো মুমিনের কাজ হবে না। কিন্তু ত্রাণ বিতরণের সময় মনে রাখতে হবে, এ কাজে যেন লোক দেখানো মনোভাব না থাকে। অনেক সংগঠন ফটোসেশন ছাড়া খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছেন। আবার অনেকে এক প্যাকেট ত্রাণ দিয়ে ছবি তোলেন কয়েকজন মিলে। সামান্য খাদ্যসামগ্রী দিয়ে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে অনেকেই বিব্রত হচ্ছেন, আত্মীয়স্বজনের কাছে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন। এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। ফটোসেশন নিয়ে অনেকেই যুক্তি দেবেন, অনেকের কাছ থেকে ফান্ড সংগ্রহ করা হয়, তাই ত্রাণ বিতরণের কাজগুলোর ফটোসেশন করতে হয়। কিন্তু এটা কোনো সুস্থ যুক্তি হতে পারে না। যারা সাহায্য করছেন তার বিশ্বাস করে করছেন, এমতাবস্থায় কেউ নয়ছয় করলে সে দায়ী হবে কেয়ামতের দিন।
দেখা যাচ্ছে, এ কারণে অনেক মানুষ না খেয়ে থাকছেন, কিন্তু ত্রাণ সংগ্রহে যাচ্ছেন না। এমতাবস্থায় আমাদের অনুরোধ থাকবে, ফটোসেশন এড়িয়ে নিরবচ্ছিন্ন ত্রাণ সরবরাহের। ত্রাণ বিতরণের সময় ভাবতে হবে, ওই এলাকার মানুষ পরিস্থিতির কারণে সাময়িক অসুবিধায় পড়েছেন। তাদের সবাই হতদরিদ্র নন, আর হতদরিদ্র না হলেও কোনো কিছু দিয়ে এভাবে প্রচার কতরতে হবে কেন?
মহান আল্লাহ বন্যায় আক্রান্ত এলাকার মানুষকে এই পরিস্থিতি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।