রবিউল আউয়াল মাস উপলক্ষ্যে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে মাসব্যাপী ‘ইসলামি বইমেলা’ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা বিভাগ এই মেলার আয়োজক।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই মেলা নিয়ে পাঠকদের মাঝে প্রচুর আগ্রহ থাকলেও অভিযোগ রয়েছে, কর্তৃপক্ষ অনেকটা দায়সারাভাবে মেলার আয়োজন করেন। যে কারণে, বিগত কয়েক বছর ধরে মেলা সেভাবে জমেনি। নেই মেলা সম্পর্কে কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণা।
বাংলাবাজারকেন্দ্রিক নতুন ধারার প্রকাশনাগুলোর অভিযোগ, অভিজাত ও নামিদামি কোনো প্রকাশনা সংস্থা মেলায় স্টল পায় না। বেশ কয়েক বছর ধরে, হাতেগোনা কয়েকটি প্রকাশনা ছাড়া অধিকাংশ স্টল পেয়েছেন রাজনৈতিক বিবেচনায় বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমগেট এলাকার ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা (হকার)। এসব স্টলে দোয়া-দরুদ, মাসয়ালা-মাসায়েল ও জীবনীর বই ছাড়া ঠাঁই পায়নি বড়মাপের কোনো লেখক-সাহিত্যিকের বই।
অন্যদিকে প্রচার-প্রচারণার নতুন পাঠকরা জানতে পারেন না, মেলা কবে শুরু হয় আর কবে শেষ হয়। এ ছাড়া কাঙ্খিতমানের বই না পেয়ে হতাশ হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ক্রেতারা।
চলতি বছর মেলা উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন স্টল বরাদ্দের জন্য দরপত্র আহবান করেছে। দরপত্রের বেশ কিছু শর্তে বলা হয়েছে, ‘প্রকৃত প্রকাশকদের কমপক্ষে ২০টি নিজস্ব পুস্তক আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া মেলায় বই-পুস্তক ব্যতীত অন্যকোনো দ্রব্যাদি যেমন ক্যাসেট, সিডি, মেমোরি কার্ড ইত্যাদি বিক্রয় করা যাবে না।’
দরপত্রের শর্তে ২০টি নিজস্ব প্রকাশনার পুস্তক থাকার শর্তের ফাঁকফোকর গলিয়েই মূলত অখ্যাত প্রকাশকরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর মেলায় অংশ নিয়ে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকাশক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘যারা নামি-দামি লেখকের বই প্রকাশ করেন, তারা মেলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এ জন্য ক্রেতাদের তেমন আগ্রহ নেই মেলা সম্পর্কে। ভালো কোনো বই বা ইসলামিক কোনো প্রকাশনা কিনতে ক্রেতারা আগের মতোই ছুটছেন নামি দামি প্রকাশনাগুলোর নিজস্ব দোকানে। এ কারণে ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে ফাউন্ডেশনের বইমেলা।’
তিনি আরও বলেন, ‘একুশের বইমেলা সম্পর্কে যেভাবে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়, এর একভাগ প্রচারণা নেই ইসলামিক বইমেলায়। তাই ক্রেতারা মেলা সম্পর্কে অন্ধকারে থাকেন।’
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘একটা সময় মানুষ অপেক্ষা করত এই মেলার জন্য। কিন্তু প্রচার-প্রচারণার অভাব, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্টল বরাদ্দসহ নানা কারণে মেলা উপলক্ষে ২৫-৩৫% পর্যন্ত ছাড় দিয়েও ক্রেতা মিলছে না। অতীতে স্বনামধন্য অনেক প্রকাশনী, যারা সারা বছর ইসলামিক বই প্রকাশ করে- তাদের সুকৌশলে বাদ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া আরও কিছু প্রকাশনী আছে, যারা মেলায় স্টল পাবে না এটা জানার পর আবেদন করে না। এখন যেহেতু দেশে একটা পরিবর্তন চলছে, আশা করি, এবার নামিদামি প্রকাশকরা আসবেন- মেলা আগের রূপে ফিরে আসবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতীতে অর্থের বিনিময়ে নামিদামি প্রকাশনাগুলোর পরিবর্তে ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের শ্রমিক ইউনিয়নের কিছু নেতা প্রভাব খাঁটিয়ে এসব করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে স্টল না পাওয়া এক প্রকাশক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বায়তুল মোকাররমের বইমেলার আয়োজক ইসলামিক ফাউন্ডেশন, উপলক্ষ্য সিরাতুন্নবি। মাসব্যাপী বইমেলা। একটা বিজ্ঞাপন কোথাও দেখেছেন? ন্যূনতম কোনো প্রচারণা নেই। তাহলে কেন এই বইমেলার আয়োজন করা হয়? আয়োজক কর্তৃপক্ষ সম্ভবত চান না, মেলায় কোনো পাঠক আসুক। অনেকটা দায়ে পড়ে অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ গরজে যতটুকু ক্যাম্পেইন করে, স্রেফ এতটুকুই। লেখকরাও নিজ দায়িত্বে আসেন, মোড়ক উন্মোচনের আয়োজন হয়। কিন্তু তাদের বসার মতো জায়গা থাকে না। এই মেলায় অংশগ্রহণ করা নিতান্তই লস প্রজেক্ট। খরচের টাকাও উঠে আসে না। তবুও আমরা যেতে চাই। প্রতিকূলতা নিয়েই ইসলামি বই ছড়িয়ে দেওয়ার সংগ্রাম জারি রাখতে চাই।’
তবে মেলা সংশ্লিষ্ট ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বর্তমানে ইসলামিক চিন্তাধারার বই কেনা ও পড়ার মতো পাঠকের অভাবে মেলায় ত্রেুতাদের উপস্থিতি কম। এ ছাড়া মেলার প্রচার-প্রচারণার জন্য ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কোনো বাজেট নেই। এক্ষেত্রে আমাদের হাত-পা বাঁধা।
জানা গেছে, মেলার আগে ও শুরু থেকে কোনো প্রচার-প্রচারণার কোনো কাজ করে না ইসলামিক ফাউন্ডেশন। কিন্তু বাংলাদেশে প্রত্যেকটি মেলার আগেই বিভিন্নভাবে প্রচারণার কাজ করে কর্তৃপক্ষ।
গতবছর মেলায় অংশ নেওয়া এক প্রকাশক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রতিবছর মেলা শুরুর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ও ইসলামিক চিন্তাধারার পত্রিকার মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করার বিষয়ে ফাউন্ডেশনে অনুরোধ জানাই। কিন্তু এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদাসীনতা ও প্রচারের অভাবে এমন সুন্দর আয়োজন নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ করে লেখকরা বলছেন, ‘প্রচার-প্রচারণাবিহীনভাবে যদি মেলা চলতে থাকে- তাহলে মেলা এমন ক্রেতাশূন্যই থাকবে। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। সব জায়গায় সংস্কার চলছে, এখানেও সংস্কার প্রয়োজন। আশা করি যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অনুধাবন করে ব্যবস্থা নেবে।’