জাকাতের হিসাবের ক্ষেত্রে ঋণ প্রসঙ্গ আসবেই। কোনো ঋণগ্রস্থ মানুষের ওপর জাকাতের আবশ্যকতা রহিত হবে কি হবে না এ বিষয়ে ইসলামি স্কলারদের ভিন্ন ভিন্ন মতামত লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের অধিকাংশ আলেমদের মতামত হলো- কোনো ব্যক্তির ওপর জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য তাকে সম্পূর্ণভাবে ঋণমুক্ত (অভাবের ঋণ স্বভাবের ঋণ নয়) হওয়া কিংবা মালিকানাধীন সমুদয় সম্পদ থেকে কৃত ঋণের পরিমাণ বিয়োগ করে যা অতিরিক্ত থাকবে তা যদি নেসাব পরিমাণ হয় তবেই কেবলমাত্র তার ওপর জাকাত ওয়াজিব হবে, অন্যথায় নয়। তাই আজকের আলোচনায় থাকছে ঋণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কিছু মাসয়ালা।
১. কারও ঋণ যদি এত হয় যা বাদ দিলে তার কাছে নেসাব পরিমাণ জাকাতযোগ্য সম্পদ থাকে না তাহলে তার ওপর জাকাত ফরজ নয়। -মুয়াত্তা মালেক: ১০৭
কিন্তু এখানে মনে রাখতে হবে যে, এই প্রসিদ্ধ মাসয়ালাটি সব ঋণের ক্ষেত্রে নয়। ঋণ দুই ধরনের হয়। ক. প্রয়োজনাদি পূরণের জন্য বাধ্য হয়ে যে ঋণ নেওয়া হয়, খ. ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যে ঋণ নেওয়া হয়।
প্রথম প্রকারের ঋণ সম্পদ থেকে বাদ দিয়ে জাকাতের নেসাব বাকি থাকে কি না তার হিসাব করতে হবে। নেসাব থাকলে জাকাত ফরজ হবে, অন্যথায় নয়। কিন্তু যে সব ঋণ উন্নয়নের জন্য নেওয়া হয় যেমন কারখানা বানানো, কিংবা ভাড়া দেওয়া বা বিক্রি করার উদ্দেশ্যে বিল্ডিং বানানো অথবা ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ঋণ নিলে জাকাতের হিসাবের সময় সে ঋণ ধর্তব্য হবে না। অর্থাৎ এ ধরনের ঋণের কারণে জাকাত কম দেওয়া যাবে না। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭০৮৭
২. বিয়ে-শাদিতে মোহরানার যে অংশ বাকি থাকে তা স্বামীর কাছে স্ত্রীর পাওনা। কিন্তু এই পাওনা স্বামীর ওপর জাকাত ফরজ হওয়া না হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলে না। অর্থাৎ জাকাতযোগ্য সম্পদের হিসাবের সময় এই ঋণ বাদ দেওয়া যাবে না; বরং সমুদয় সম্পদের জাকাত দিতে হবে। -রদ্দুল মুহতার: ২/২৬১
উল্লেখ্য যে, বিনা ওজরে মোহরানা আদায়ে বিলম্ব করা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
৩. অন্যকে যে টাকা কর্জ হিসেবে দেওয়া হয়েছে বা ব্যবসায়ী কোনো পণ্য বাকিতে বিক্রয় করেছে এই পাওনা টাকা পৃথকভাবে বা অন্য জাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে মিলিতভাবে নেসাব পূর্ণ করলে তারও জাকাত দিতে হবে। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭১১১-৭১১৩
৪. পাওনা উসূল হওয়ার পর ওই টাকার জাকাত আদায় করা ফরজ হয়। তার আগে আদায় করা জরুরি নয়, তবে আদায় করলে জাকাত আদায় হয়ে যাবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১০৩৪৭
৫. উপরোক্ত ক্ষেত্রে পাওনা উসূল হতে যদি কয়েক বছর সময় অতিবাহিত হয়ে যায় তাহলে উসূল হওয়ার পর বিগত সব বছরের জাকাত আদায় করা ফরজ হয়। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭১১৬
৬. স্বামীর কাছে পাওনা মোহরানা নেসাব পরিমাণ হলেও তা স্ত্রীর হস্তগত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাতে জাকাত ফরজ হয় না। হস্তগত হওয়ার পর যদি আগে থেকেই ওই নারীর কাছে জাকাতযোগ্য সম্পদ নেসাব পরিমাণ না থাকে তাহলে এখন থেকে বছর গণনা শুরু হবে এবং বছর পূর্ণ হওয়ার পর জাকাত আদায় করতে হবে।
৭. আর যদি স্ত্রী মোহরানা পাওয়ার আগ থেকেই নেসাব পরিমাণ অর্থ বা সম্পদের মালিক থেকে থাকে তাহলে এই সদ্যপ্রাপ্ত মোহরানা অন্যান্য টাকা-পয়সা বা সম্পদের সঙ্গে যোগ হবে এবং সে সব পুরানো সম্পদের বছর পূর্ণ হওয়ার পর সমুদয় সম্পদের জাকাত দিতে হবে।
আরও পড়ুন:
যাদের ওপর জাকাত ফরজ
জাকাত আদায়ের জন্য যা জানা জরুরি
জাকাত অনাদায়ের পরিণতি
কী পরিমাণ সম্পদ থাকলে জাকাত দিতে হবে