কী পরিমাণ সম্পদ থাকলে জাকাত দিতে হবে
নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর জাকাত দেওয়া ফরজ। নেসাব কি, এ সম্পর্কে থাকছে আজকের আলোচনা।
১. স্বর্ণের ক্ষেত্রে জাকাতের নেসাব হলো বিশ মিসকাল। -সুনানে আবু দাউদ: ১/২২১
আধুনিক হিসাবে সাড়ে সাত ভরি।
২. রুপার ক্ষেত্রে নেসাব হলো- দু’শ দিরহাম। -সহিহ বোখারি: ১৪৪৭
আধুনিক হিসাবে সাড়ে বায়ান্ন তোলা। এ পরিমাণ সোনা-রুপা থাকলে জাকাত দিতে হবে।
৩. প্রয়োজনের উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা বা বাণিজ্য-দ্রব্যের মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ হয় তাহলে জাকাতের নেসাব পূর্ণ হয়েছে ধরা হবে এবং এর জাকাত দিতে হবে। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৬৭৯৭
৪. যদি সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য- এগুলোর কোনোটি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু এসবের একাধিক সামগ্রী এ পরিমাণ রয়েছে, যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে এক্ষেত্রে সকল সম্পদ হিসাব করে জাকাত দিতে হবে। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭০৬৬
আরও পড়ুন:
যাদের ওপর জাকাত ফরজ
জাকাত আদায়ের জন্য যা জানা জরুরি
জাকাত অনাদায়ের পরিণতি
কিছু দৃষ্টান্ত ক. কারো কাছে নেসাবের কম সোনা এবং নেসাবের কম রুপা আছে, কিন্তু যে পরিমাণ সোনা আছে তার মূল্য মজুদ রুপার সঙ্গে যোগ করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য হয় বা তার চেয়ে বেশি হয়। তাহলে সোনা-রুপার মূল্য হিসাব করে জাকাত আদায় করতে হবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৯৯৭৯
খ. কারও কাছে কিছু স্বর্ণালংকার আর কিছু উদ্বৃত্ত টাকা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য আছে যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয়। এর জাকাত দিতে হবে। -রদ্দুল মুহতার: ২/৩০৩
গ. কারও কাছে নেসাবের কম রুপা আর কিছু উদ্বৃত্ত টাকা বা বাণিজ্যদ্রব্য আছে যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয়। এরও জাকাত দিতে হবে। -আদ্দুররুল মুখতার: ২/৩০৩
৫. নেসাবের অতিরিক্ত সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা ও বাণিজ্যদ্রব্যের জাকাত আনুপাতিক হারে দিতে হবে। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭০৩২
৬. কার কাছে সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য পৃথকভাবে বা সম্মিলিতভাবে নেসাব পরিমাণ ছিল, বছরের মাঝে এ জাতীয় আরও কিছু সম্পদ কোনো সূত্রে পাওয়া গেল এক্ষেত্রে নতুন প্রাপ্ত সম্পদ পুরাতন সম্পদের সঙ্গে যোগ হবে এবং পুরাতন সম্পদের বছর পূর্ণ হওয়ার পর সমুদয় সম্পদের জাকাত দিতে হবে। বছরের মাঝে যা যোগ হয়েছে তার জন্য পৃথক বছর পূর্ণ হওয়া লাগবে না। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৬৮৭২
৭. বছরের শুরু ও শেষে নেসাব পূর্ণ থাকলে জাকাত আদায় করতে হবে। মাঝে নেসাব কমে যাওয়া ধর্তব্য নয়। অবশ্য বছরের মাঝে সম্পূর্ণ সম্পদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তবে ওই সময় থেকে নতুন করে বছরের হিসাব আরম্ভ হবে এবং এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর জাকাত আদায় করতে হবে। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭০৪২
যে সব জিনিসের ওপর জাকাত ফরজ নয়
১. নিজ ও পোষ্য পরিজনের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও বাহনের ওপর জাকাত ফরজ নয়। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৪/১৯-২০
২. ঘরের আসবাবপত্র যেমন খাট-পালঙ্ক, চেয়ার-টেবিল, ফ্রিজ, আলমারি ইত্যাদি এবং গার্হস্থ্য সামগ্রী যেমন হাড়ি-পাতিল, থালা-বাটি, গ্লাস ইত্যাদির ওপর জাকাত ফরজ নয়। তা যত উচ্চমূল্যেরই হোক না কেন। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭০৯৩
তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, যেসব বস্তুর ওপর জাকাত আসে না সেগুলোতে যদি সোনা-রুপা সংযুক্ত থাকে তাহলে অন্যান্য জাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে এই সংযুক্ত সোনা-রুপারও জাকাত ফরজ হবে।
৩. পরিধেয় বস্ত্র, জুতা যদি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশিও থাকে তবুও তাতে জাকাত ফরজ হবে না। -রদ্দুল মুহতার: ২/২৬৫
৪. দোকান-পাট বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এমন আসবাবপত্র যা ব্যবসাপণ্য নয়, তার ওপর জাকাত ফরজ নয়। তবে ফার্নিচারের দোকানে বিক্রির উদ্দেশ্যে যেসব ফার্নিচার রাখা থাকে তা যেহেতু বাণিজ্যদ্রব্য তাই এসবের ওপর জাকাত ফরজ হবে।
৫. ঘর-বাড়ি বা দোকানপাট তৈরি করে ভাড়া দিলে তাতেও জাকাত ফরজ নয়। তবে এসব ক্ষেত্রে ভাড়া বাবদ যে অর্থ পাওয়া যাবে তার ওপর জাকাত দিতে হবে।
৬. ভাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর-বাড়ি বা অন্য কোনো সামগ্রী যেমন ডেকোরেটরের বড় বড় ডেগ, থালা-বাটি ইত্যাদি ক্রয় করলে তার ওপরও জাকাত ফরজ নয়। তবে ভাড়া বাবদ প্রাপ্ত অর্থের ওপর জাকাত আসবে।