নবী করিম সা.-এর অনন্য কিছু গুণ

প্রবন্ধ, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-29 12:57:03

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত জীবন ব্যবস্থা ইসলাম ভারসাম্যের জন্য অনন্য। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ছিল অপূর্ব ভারসাম্যপূর্ণ। জীবনের সব দিক দিয়েই তিনি ভারসাম্য রক্ষা করেছিলেন।

আমরা যদি পরিবেশের দিকে দেখি, তাহলে দেখতে পাবো হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পরিবেশের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি জানো যে আগামীকাল কেয়ামত নিশ্চিত। তবু আজ একটি গাছ লাগাও।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জীবজন্তুর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) নির্বিচারে জীবজন্তু হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, তোমরা পৃথিবীর মাটিকে দয়া করো তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনিও তোমাদের দয়া করবেন।

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা আজ পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণে উদ্বিগ্ন। রাসূলুল্লাহ (সা.) আদর্শ অনুযায়ী বৃক্ষরোপণ করতে পারলে এবং তার আদর্শ মেনে চলতে পারলে পৃথিবীতে অশান্তি বিরাজ করতো না। সুতরাং আজকের অশান্ত পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে মুহাম্মদ (সা.)-এর আনীত ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা ইসলামের বিকল্প নেই।

লাজুকতা অন্যতম উৎকৃষ্ট গুণ, এগুণেও রাসূলুল্লাহ (সা.) গুণান্বিত ছিলেন। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা নিজেই সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের এ আচরণ নবীকে পীড়া দেয়, তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচবোধ করেন, কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না। -সূরা আহজাব: ৫৩

বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) পর্দায় অবস্থানকারী কুমারী মেয়ের চেয়েও অধিক লাজুক ছিলেন। তিনি যখন কোনো কাজ অপছন্দ করতেন, তার চেহারায় আমরা তা চিনতে পারতাম। -সহিহ বোখারি: ৫৬৩৭

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সহচরদের সঙ্গে উত্তম ও সুন্দরভাবে মেলামেশা করতেন। হজরত আলী (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বাপেক্ষা প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী, সর্বাপেক্ষা সত্যভাষী, সর্বাপেক্ষা সম্মানজনক লেনদেনকারী। -সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭১


ইবনে আবু হারাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সদা প্রফুল্লচিত্ত, কোমল চরিত্রের অধিকারী, সরল হৃদয়বান। রূঢ় স্বভাবের ছিলেন না, নির্দয় প্রকৃতিরও ছিলেন না, নির্লজ্জ, গিবতকারী ও বিদ্রূপকারী ছিলেন না। অতিরিক্ত গুণকীর্তনকারীও ছিলেন না, মনে চায় না- এমন বস্তু থেকে বিমুখ থাকতেন, কিন্তু কাউকে তা থেকে নিরাশ করতেন না। কেউ ডাকলে সাড়া দিতেন, কেউ উপহার দিলে গ্রহণ করতেন, যদিও তা ছাগলের খুর হত এবং তার উত্তম প্রতিদান দিতেন।


রাসূলুল্লাহ (সা.) কে যখন কোনো সাহাবি বা পরিবারের কোনো সদস্য ডাকতেন তিনি লাব্বাইক বলে সাড়া দিতেন। তিনি সাহাবাদের সঙ্গে রসিকতা করতেন। তাদের সন্তানদের সঙ্গে খেলা করতেন এবং নিজের কোলে বসাতেন। মদিনার দূর প্রান্তে বসবাসকারী কেউ অসুস্থ হলে তারও খোঁজখবর নিতেন। আবেদনকারীর আবেদন গ্রহণ করতেন। সাহাবাদেরকে উপনামে ডাকতেন। তিনি তাদের সম্মান করে তাদের প্রিয় নাম দ্বারা ডাকতেন। সীমালংঘন না করলে কাউকে কথা বলা থেকে বারণ করতেন না।

বিনয় উঁচু মাপের চারিত্রিক গুণ। এ গুণের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বোচ্চ উদাহরণ। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের কাপড় নিজে সেলাই করতেন। নিজ হাতে ছাগলের দুধ দোহন করতেন। নিজের জুতা নিজে সেলাই করতেন। নিজের সেবা নিজে করতেন, নিজের ঘর নিজে পরিস্কার করতেন। নিজের উট নিজে বাঁধতেন। নিজের উটকে নিজে ঘাস ভক্ষণ করাতেন। গোলামের সঙ্গে বসে খেতেন, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিজে বহন করে বাজারে নিতেন।

একদা এক লোক রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট আসল, কিন্তু সে তার ভয়ে শিহরিত হলো, তিনি তাকে বললেন, তুমি নিজকে হালকা (স্বাভাবিক) করে নাও, কেননা আমি রাজা-বাদশা নই। নিশ্চয় আমি, কোরাইশের এমন এক মহিলার সন্তান, যে শুকনো গোশত খায়। -ইবনে মাজাহ: ৩৩০

রাসূলুল্লাহ (সা.) অত্যধিক প্রশংসা থেকে বারণ করে বলেছেন, তোমরা আমার অত্যধিক প্রশংসা করো না, যেরকম খ্রিস্টানরা মরিয়ম তনয়ের ক্ষেত্রে করেছে। নিশ্চয় আমি আল্লাহর বান্দা। অতএব তোমরা (আমাকে) বলো, আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল। -সহিহ বোখারি: ৩১৮৯

এ সম্পর্কিত আরও খবর