ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গিতে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণকে একটি ক্রান্তিকাল হিসেবে গণ্য করা হয়। ‘গ্রহণ’ সূর্য ও চন্দ্রের ওপর প্রযোজ্য আল্লাহতায়ালার কুদরতের নিদর্শন বৈ অন্য কিছু নয়।
জাহিলি যুগের মানুষ ধারণা করত, বিশ্বে কোনো মহাপুরুষের জন্ম-মৃত্যু কিংবা দুর্যোগ-দুর্ভিক্ষ প্রভৃতির বার্তা দিতে গ্রহণ হয়। ইসলাম এ বিশ্বাসকে ভ্রান্ত ধারণা বলে আখ্যায়িত করেছে এবং ‘গ্রহণ’কে সূর্য ও চন্দ্রের ওপর একটি বিশেষ ক্রান্তিকাল বা বিপদের সময় বলে গণ্য করেছে। এ জন্য গ্রহণের সময় মুমিনদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন এ সময়ে অন্যান্য কাজকর্ম বন্ধ রেখে আল্লাহতায়ালার তাসবিহ পাঠ, দোয়া-দরুদ ও নামাজ আদায়সহ প্রভৃতি আমলে মশগুল থাকে।
আমাদের সমাজে এ কথা চালু আছে যে, চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী নারী কোনো কিছু কাটলে, ছিঁড়লে বাচ্চা ঠোঁটকাটা জন্মায়, কোনো কিছু ভাঙলে অথবা বাঁকা করলে সন্তান বিকলাঙ্গ হয়। আকাশের দিকে তাকালে চোখের আলো কমে যায়। গ্রহণের সময় কিছু খেতে হয় না। এ ধরনের যত কথা প্রচলিত আছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। এসবের সঙ্গে কোরআন-হাদিসের কোনো সম্পর্ক নেই।
আরও পড়ুন: সূর্যগ্রহণকালে নামাজ আদায় সুন্নত
চন্দ্র, সূর্য বা অন্যকোনো সৃষ্ট বস্তু অদৃশ্যভাবে কারও উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে- এ ধরনের বিশ্বাস রাখা যাবে না। এটা তাওহিদ পরিপন্থী বিশ্বাস। যে আল্লাহতায়ালা ও শেষ দিবসে বিশ্বাস রাখে, তার মনে রাখা উচিত, আল্লাহতায়ালার অসংখ্য নিদর্শনের মধ্যে চন্দ্র-সূর্যের গ্রহণও একেকটি নিদর্শন।
কেউ যদি চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ দেখে, তবে তার উচিত হলো হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী কাজ করা ও বেশি বেশি করে ওই সময় আল্লাহকে স্মরণ করা।
সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী নারী বা কারও জন্য জাগতিক কোনো কাজ করা বা না করা নিয়ে কোনোরকম বিধি-নিষেধ নেই। এ ব্যাপারে যা প্রচলিত আছে, তা কেবলই কুসংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস। এসব মানলে কিংবা বিশ্বাস করলে মারাত্মক গোনাহ হবে।
বরং সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণকে আল্লাহতায়ালার কুদরতি নিদর্শন বলে বিশ্বাস করতে হাদিসে বলা হয়েছে। পুরুষদের মসজিদে জামাতের সঙ্গে সালাতুল কুসুফ (সূর্যগ্রহণের সময়) ও সালাতুল খুসুফ (চন্দ্রগ্রহণের সময়) আদায়ের জন্য বলা হয়েছে। এর বাইরে এতে কোনোরূপ বিধি-নিষেধ নেই।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছেলে ইবরাহিমের মৃত্যুর দিনটিতেই সূর্যগ্রহণ হরো। তখন আমরা সকলে বলাবলি করছিলাম যে, নবীপুত্রের মৃত্যুর কারণেই এমনটা ঘটেছে। আমাদের কথাবার্তা শুনে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, সূর্য এবং চন্দ্র আল্লাহর অগণিত নিদর্শনসমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন। কারও মৃত্যু কিংবা জন্মগ্রহণের ফলে চন্দ্রগ্রহণ বা সুর্যগ্রহণ হয় না।’ –সহিহ বোখারি: ১০৪৩
সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ দ্বারা আল্লাহ তার বান্দাদের ভীতি প্রদর্শন করেন বলেও হাদিসে উল্লেখ আছে। যাতে মানুষ ঈমান ও আমলমুখি হয় এবং পাপাচার বন্ধ করে।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, একদা সূর্যগ্রহণ হলে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ভীত হয়ে মসজিদে প্রবেশ করে দীর্ঘ নামাজ আদায় করে বললেন, ‘এ হচ্ছে একটি নিদর্শন, যা আল্লাহ প্রেরণ করেন। এটা কারও মৃত্যু কিংবা জন্মের জন্য সংঘটিত হয় না; বরং এর দ্বারা আল্লাহ তার বান্দাদের ভীতি প্রদর্শন করেন। তোমরা যখন এর কোনো কিছু দেখবে তখন ভীত মনে তার (আল্লাহর) জিকির, দোয়া ও তার ক্ষমা প্রার্থনার দিকে দ্রুত গমন করবে।’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
সুতরাং আমাদের উচিত, চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সময় কোরআন-হাদিসের নির্দেশনা এবং হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসের আলোকে আমল করা।