হজের প্রস্তুতিতে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি

, ইসলাম

ড. মুফতি মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-08-31 10:39:01

সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার ঘর কাবা শরীফকে এক পলক দেখার জন্য, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজায় পৌঁছে সালাম দেওয়ার জন্য সবারই মন টানে। কল্পনার আয়নায় কতবার যে ঘুরে আসা হয় মক্কা-মদিনার পথে প্রান্তরে, যেখানে কেটেছে নবীজীর তেষট্টি বছর। মনের সাধ জাগে হাজিদের সঙ্গে আরাফার ময়দানে সারাদিন কাটিয়ে দেওয়ার। এ সাধের সঙ্গে সাধ্যেরও ব্যাপার জড়িত। যখন মক্কা-মদিনায় যাওয়ার সুযোগ আসে তখন সাধারণতঃ কেউ তা হাতছাড়া করতে চায় না। যতদিন এ সুযোগ না আসে ততদিন আল্লাহর কাছে হজের সুযোগ চাইতে থাকা। মনের আবেগ নিয়ে আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ অবশ্যই তাওফিক দেবেন।

যদি কারও কাছে মক্কায় হজের সময়ে যাতায়াতের টাকার ব্যবস্থা হয়ে যায়, তাহলে তার জন্য হজ করা ফরজ। তখন দেরি করা কিছুতেই ঠিক নয়। হজের গুরুত্ব ও ফজিলত প্রসঙ্গে কমবেশি সবাই অবগত। সুতরাং যখন হজ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন, তখন থেকে শুরু হয়ে যাবে হজের প্রস্তুতি। হজের নিয়মাবলী, নির্দেশিকা, অভিজ্ঞতা ও মাসয়ালা ইত্যাদি বিষয়ে অনেক বই পাওয়া যায়। শুরু করতে হবে এগুলো পড়া। বই পড়লে জানা হয়, আগ্রহ বাড়ে। আগ্রহ বাড়লেই এক সময় বাস্তবায়নের ইচ্ছা হয়, ইচ্ছা বাস্তবায়িত হয়ে যায় আল্লাহর ইচ্ছায়।

ভালো সঙ্গী দরকার
কথায় আছে, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।’ এটা শুধু ছোটদের জন্য নয়, বড়দের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। হজের মতো আমলের ক্ষেত্রেও। হজে যেমন সওয়াব বেশি, আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায় সহজে, আবার হজে অনিয়ম হলে, সঙ্গী-সাথীদের কারণে নিয়তে এলোমেলো চলে এলে, এ হজ ক্ষতিরও কারণ হয়। অনেককে দেখা যায়, হজ করে এসে আগের চেয়ে খারাপ জীবন-যাপন করতে। এটা তার হজ কবুল না হওয়ার প্রভাবেও হতে পারে। তাই আমলদার, মুত্তাকি, ভালো মানুষের সঙ্গে হজপালনের চেষ্টা করবেন। একজন মুত্তাকি সাথী খুঁজলে অবশ্যই পেয়ে যাবেন। পাঁচ সাতজন ভালো মানুষের সঙ্গে হজ হলে তো সোনায় সোহাগা।

মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার পূর্বে আপনাকে ইনজেকশন নিতে হবে নিকটস্থ হাসপাতালে। সেখান থেকে ছোট বইয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট লিখে দিবে। এটা সঙ্গে রাখবেন।

অারও পড়ুন: মেসিডোনিয়া থেকে সাইকেল চালিয়ে হজপালনে দুই বন্ধু

ভিসা ও টিকিট
ভিসা ও টিকিটের দায়িত্ব হজ কাফেলা বা ট্রাভেল এজেন্সির। এ কাজগুলো নিয়ে টেনশন করার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে সময়মতো সবকিছু হলো কিনা- তা খোঁজ নিন। এগুলো হয়ে গেলে রওয়ানা দেওয়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিবেন। সতর্ক থাকবেন অনেক সময় রেজিস্ট্রেশন বা অন্য কোথাও সমস্যার কারণে ভিসা হয় না। ভিসা ও টিকিট না পাওয়া পর্যন্ত আবার তারিখ চূড়ান্ত হয় না। তাই এগুলো নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।

হজ প্রশিক্ষণ
হজে যাওয়ার আগে হজের প্রশিক্ষণ নেওয়া ভালো। এতে অনেক বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব হয়। প্রশিক্ষকগণ তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলেন, তা অনেক উপকারী। কিছু কিছু কাজ যেমন ইহরামের কাপড় পরিধান তা বই পড়ে শেখা যায় না। এ সবের জন্য প্রশিক্ষণ উপকারী। এ সব প্রশিক্ষণে উপস্থিত হলে হজের প্রতি টান আরও বেড়ে যায়।

বান্দার হক আদায়
হজ ফরজ হওয়ার শর্তের মধ্যে সফরকালীন পরিবারের খাদ্যবস্ত্রের ব্যবস্থা করে যাবার সামর্থের ব্যাপারটি রয়েছে। তাই সফরের এক দেড় মাস সময়ে পরিবারের লোকেরা কোথা থেকে প্রয়োজন মিটাবে তার ব্যবস্থা, দিক নির্দেশনা ও অর্থ জোগান দিয়ে যেতে হবে।

কেউ যদি কোনো টাকা পায় তাহলে যথাসম্ভব আদায় করে যেতে হবে। আদায় করা সম্ভব না হলে সময় চেয়ে নিতে হবে এবং এ ধরনের ঋণের কথা পরিবারের লোকজনের কাছে বলে যেতে হবে। হায়াত ও মওতের কথা তো বলা যায় না।

বোনের অংশ যদি না দেওয়া হয়ে থাকে অথবা শয়তানের প্ররোচণায় যদি কারও হক নষ্ট করা হয়ে থাকে তাহলে হজের পূর্বে অবশ্যই এর সমাধান করে যাবেন। আপনি নিষ্পাপ হয়ে ফিরতে চাচ্ছেন। কারও হক পাওনা থাকলে আপনি তো নিষ্পাপ হতে পারবেন না।

হজের কেনাকাটা ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী
হজের উদ্দেশ্যে অল্প কিছু কেনাকাটা করতে হয়।
১. ইহরামের দুই সেট কাপড় কিনতে হবে। যেহেতু সেলাইয়ের কোনো দরকার নেই তাই লুঙ্গি ও চাদর পরিমান সাদা সুতি কাপড় নিলেই হলো।

২. স্যান্ডেল জুতা। ইহরাম অবস্থায় সু জুতা বা পা ঢেকে থাকে এমন জুতা পরা যায় না। আরামদায়ক দু’তিন জোড়া স্যান্ডেল কিনে নিবেন। কারণ ছিড়ে যেতে পারে। মসজিদ পরিস্কার করার সময় বক্স থেকে জুতা সরিয়ে নিলে তা আর খোঁজে নাও পেতে পারেন।

৩. একটি ট্রলি ব্যাগ লাগবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখার জন্য। ট্রলি ব্যাগ ছাড়াও মিনায় কাপড়-চোপড় নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি হাত ব্যাগও সঙ্গে রাখা দরকার।

৪. ঔষধপত্র (নাপা, ফিলমেট, সেলাইনসহ) প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী পুরো সফরের ঔষধ সঙ্গে নিয়ে নিবেন। সেখানে ঔষধের অনেক দাম।

৫. প্রয়োজনীয় ডলার বা রিয়াল নিতে হবে।

৬. হজ ও উমরার মূল ছয়-সাত দিন ছাড়া বাকি সময় সাধারণ পোশাকে থাকতে হয়। তাই এই দীর্ঘ সময় ব্যবহার উপযোগী কাপড়, লুঙ্গি, পায়জামা, পাঞ্জাবী, সেলোয়ার কামিজ, বোরকা ইত্যাদি সঙ্গে নিতে হবে।

৭. মেয়েদের পর্দা করার জন্য বিভিন্ন সামগ্রী, বিশেষ করে মিনার তাঁবুতে পর্দা টানানোর জন্য চাদরের ব্যবস্থা থাকা ভালো।

৮. প্রসাধনী সামগ্রী। ইহরাম অবস্থা ছাড়া সব প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করা যায়। তাই তেল, সাবান, ব্রাশ, পেষ্ট, মেসওয়াক, টয়লেট পেপার, ভেসলিন ক্রীম ইত্যাদি সঙ্গে নিতে পারেন।

৯. রেজার, ব্লেড, কাঁচি, চাকু সঙ্গে নিলে অবশ্যই ট্রলি ব্যাগে নিবেন। হাত ব্যাগে এগুলো নিতে দেয় না।

লেখক: অধ্যাপক, উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এ সম্পর্কিত আরও খবর