মেসিডোনিয়া থেকে সাইকেল চালিয়ে হজপালনে দুই বন্ধু
ইউরোপের অনন্য এক ঋতুর দেশ বলা হয় মেসিডোনিয়াকে। দেশটির ঋতু এবং রূপবৈচিত্র ভিন্ন হওয়ায় পর্যটকদের কাছে মেসিডোনিয়া বেশ প্রিয়। প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলো দেশটিতে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। রয়েছে প্রাচীন অসংখ্য ধর্মীয় নিদর্শন।
ইতিহাসখ্যাত ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট কিং’-এর জন্ম মেসিডোনিয়ায়। ২৫ হাজার ৭১৩ বর্গকিলোমিটারের দেশ মেসিডোনিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। রাজধানীর নাম স্কোপজে।
দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষ অর্থডক্স চার্চের অনুসারী। মুসলিম ৩৩ শতাংশের কিছু বেশি। দেশটিতে ১২ শত চার্চ বং পাঁচ শতাধিক মসজিদ রয়েছে।
মেসিডোনিয়াকে বলা হয় ইউরোপের অন্যতম মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। সংখ্যা এবং অনুপাতে এর চেয়ে বেশি মুসলিম অধ্যুষিত ইউরোপীয় দেশ হচ্ছে- তুরস্ক, কসোভো, আলবেনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা। কসোভো, আলবেনিয়া ও হার্জেগোভিনার মোট জনসংখ্যার ৯০, ৭০ এবং ৪৮ শতাংশ মুসলিম।
২০১২ সালের শুমারি অনুযায়ী মেসিডোনিয়ায় মুসলিমদের সংখ্যা ৮ লাখের মতো। স্পেনে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মুসলিম ধর্মপ্রচারক ও জ্ঞানান্বেষীরা ছড়িয়ে পড়েন। তাদের মাধ্যমে মেসিডোনিয়ায় ইসলামের প্রচার-প্রসার ঘটে।
মুসলিম ধর্মপ্রচারকরা সেখানে মসজিদ ও ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ১৩৮২ খ্রিস্টাব্দে উসমানিয় শাসকরা মেসিডোনিয়া বিজয় করেন এবং তাদের সহযোগিতায় সেখানে দ্রুত ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত প্রথম বলকান যুদ্ধ পর্যন্ত তুর্কিরাই কার্যত মেসিডোনিয়া শাসন করে।
উসমানিয় শাসকরা মেসিডোনিয়ায় বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। উসমানিয় শাসন আমলে গড়ে তোলা পাঁচ শতাধিক মসজিদ এখনও মেসিডোনিয়ায় টিকে আছে।
বর্তমানে মেসিডোনিয়ার মুসলিম জনসংখ্যার হার ৩৩ ভাগ। যা ২০৫০ সাল নাগাদ ৫৬ ভাগে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মেসিডোনিয়ার মুসলিম জনগণের অধিকাংশই আলবেনিয় ও তুর্কি বংশোদ্ভূত। বাকিরা বসনিক ও স্থানীয়।
দেশটির মুসলমানদের মধ্যে ইসলাম পালেন বেশ উৎসাহ ও আগ্রহ দেখা যায়। বিভিন্ন সময় এর প্রমাণও পাওয়া যায়। এরই সূত্র ধরে এবার মেসিডোনিয়ার দুই যুবক সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার পথ বাই সাইকেলে পাড়ি দিয়ে পবিত্র হজপালনের জন্য সৌদি আরবের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন।
তরুণ আইনজীবী সেনাদ ইদরিসি (Senad Idrisi) এবং ইমাম আমির আসলানি (imam Amir Aslani) নামের ওই দুই বন্ধু দক্ষিণ মেসিডোনিয়ার তিতোভো এলাকা থেকে তাদের যাত্রা শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে তারা তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পৌঁছেছেন।
তাদের নিয়ে তুরস্কের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ডেইলি সাবাহ বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এই দুইজনকে পবিত্র হজ পালন করতে তিন মহাদেশের ছয়টি দেশ পাড়ি দিতে হচ্ছে। দুই বন্ধু নিজেদের এই ঐতিহাসিক ভ্রমণে একটি ক্যামেরা সঙ্গী করেছেন। তারা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এই স্মৃতি রেখে যাতে চান।
ইদরিসি বলেন, ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম এবং ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলমানরা পায়ে হেঁটে হজ পালন করতে যেতেন। হজপালনে তাদের সেই স্মৃতি, ত্যাগ ও আত্মনিবেদনের বিষয়গুলো গভীরভাবে হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করার জন্য তারা বাই সাইকেলে চড়ে হজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সাইকেলে চেপে হজে যাওয়ার জন্য বিগত দুই বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন দুই বন্ধু। তাদেরকে পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধবরা সমর্থন করছেন। মেসিডোনিয়ার অনেকে সামাজিক মাধ্যমে তাদের এই অদম্য ভ্রমণকে অনুসরণ করছেন।
ইস্তাম্বুলে পৌঁছালেও পবিত্র মক্কা নগরীতে পৌঁছাতে তাদের আরও ৩০ থেকে ৩২ দিন লাগবে। ফেরিতে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে মিসর ও জর্ডান হয়ে তারা সৌদি আরবে প্রবেশ করবেন।
হজ বিষয়ে জানতে আরও পড়ুন
** হজ: আল্লাহপ্রেমিকদের মিলনমেলা
** হিসাব রক্ষক ও ফিল্ড সুপারভাইজার এখন সরকারি হজগাইড!
** শ্রেষ্ঠ আমল হজ, বিনিময়ে জান্নাত
** যেসব পদ্ধতিতে হজ আদায় করা যায়
** বদলি হজের লোক বাছাইয়ে সর্তক থাকুন
** পবিত্র হজ ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে
** জেনে নিন হজে উচ্চারিত কিছু আরবি পরিভাষার অর্থ
** ৫১ সদস্যের হজ প্রশাসনিক দল গঠন
** আল্লাহর ঘর কাবা শরীফের আদবসমূহ
** হজে কোনো কোরবানি নেই, আছে দমে শোকর