পবিত্র হজ কিংবা উমরার তওয়াফ, সায়ী এমনকি কাবাঘরের সামনে ও নবীর রওজার পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলা খুবই পরিচিত ও সাধারণ দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। দেরিতে হলেও এসব বন্ধের উদ্যোগ নিলো সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ।
মক্কা নগরীর মসজিদে হারাম তথা কাবা শরিফ এবং মদিনার মসজিদে নববীতে সেলফি তোলা নিষিদ্ধ করেছে সৌদি হারামাইন কর্তৃপক্ষ। মসজিদের পবিত্র রক্ষার পাশাপাশি ইবাদতকারীদের মনোযোগ এবং একাগ্রতা নিশ্চিতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালে এই দুই মসজিদে সেলফি তোলার বিষয়ে সর্বপ্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও নতুন করে এটি আলোচনায় এসেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে হজ ও উমরা পালন করতে যেয়ে অনেকে কাবা শরিফ ও মসজিদে নববীতে সেলফি তুলে ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে পোস্ট করেন। এতে দুই পবিত্র স্থানে এসে ইবাদত-বন্দেগির পরিবর্তে পর্যটকের মতো আচরণ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। তাই চলতি মাস থেকে কড়াকড়িভাবে এটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে।
পবিত্র হজ ও উমরা পালনে যেয়ে অনেক মুসল্লি সেলফি তুলে থাকেন। এজন্য অন্যান্য হজযাত্রীদের নানা রকমের সমস্যা পড়তে হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় সেলফির কারণে বিতর্কের মুখোমুখি হতে হয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষকে। এ কারণে এবার পবিত্র নগরীতে সেলফি তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে হারামাইন কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, নির্দিষ্ট এই স্থানগুলোতে কাউকে সেলফি তুলতে দেখলে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তারা প্রথমে বাধা দেবে, না শুনলে মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হবে।
এ সংক্রান্ত ঘোষণা বিভিন্ন ভাষায় লিখে মক্কা-মদিনার প্রবেশ পথে টাঙিয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া হজ ও উমরা পরিচালনাকারী সংস্থাকে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের পক্ষ থেকে এই নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
অবশ্য বেশ কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবের ইসলামি স্কলারা সেলফি বন্ধের কথা বলে আসছেন। তারা এর বিরুদ্ধে ফতোয়াও প্রদান করেছেন। মসজিদে হারামের দারুল ইফতার সদস্য ও ইসলামি আইনশাস্ত্রের অধ্যাপক মুহাম্মদ আল মাসউদি ফতোয়ায় বলেছেন, পবিত্র কাবা ঘরে সেলফি তোলা শিরক।
তার দাবি, হজ পালনরত অবস্থায় যদি কেউ ছবি তুলে প্রকাশ করে তাহলে সেটা হবে রিয়া (লোক দেখানো ইবাদত)। আর রিয়া শিরকের সমতুল্য।
অধ্যাপক মাসউদির মতে, যে সব ব্যক্তি পবিত্র হজপালন করতে এসে মক্কা নগরীর বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান, হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনের স্থানসমূহ এসে নিজেদের হজের ছবি বিভিন্ন গণযোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে। সত্যিকার অর্থে তাদের এ কাজ রিয়াতে পরিণত হয়।
মসজিদে হারামের দারুল ইফতার সদস্য আরও বলেন, সে সব ব্যক্তি হজপালন করতে এসে নিজের ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তারা হজের পাশাপাশি অন্য আরেকটি কাজে নিয়োজিত হয়। এর ফলে তারা স্বাধীনভাবে, একাগ্রচিত্তে ইবাদত করতে পারে না। আর এ ছবি যখন সামাজিক নেটওয়ার্কে প্রকাশ করে, তখন সেটা রিয়াতে পরিণত হয়। আর রিয়া সর্বাবস্থায় হারাম।
হজপালনে যেয়ে সেলফি বিষয়ে ইসলামি চিন্তাবিদদের অভিমত হলো, আল্লাহর ঘর কাবা শরিফের আঙিনায় বসে ছবি বা সেলফি তোলা জঘন্যতম অপরাধ। এটা স্পষ্টভাবে পবিত্র কাবার সঙ্গে বেয়াদবি। সরাসরি আল্লাহর হুকুমের সীমালঙ্ঘন।
অবশ্য অপ্রয়োজনে ছবি বা সেলফি পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় তোলা অন্যায় ও নাজায়েজ। কাবা আঙিনায় তো অবশ্যই নাজায়েজ। এখন কেউ যদি ছবি তোলে তবে সে গোনাহগার হবে। কিন্তু এই হারাম কাজকে যদি হালাল মনে করে তাহলে তার ঈমান নিয়ে প্রশ্ন ওঠবে।
পবিত্র কোরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের ভিত্তিতে পৃথিবীর সব ইমাম ফকিহ ও ধর্ম বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো- অতি প্রয়োজন ছাড়া ছবি তোলা আঁকা ও প্রকাশ করার অনুমতি ইসলাম দেয়নি। কাবার আঙিনায় তো আরও না।
সমকালীন মুফতিদের অভিমত হলো, প্রয়োজন ছাড়া ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা জায়েজ নয়। তবে অনেক মুফতি বলেছেন, কম্পিউটার বা মোবাইলের মেমোরি বা ভিন্ন ডাটাবেজে সংরক্ষিত ছবি প্রিন্ট করার আগ পর্যন্ত জায়েজ। বিষয়টি আরও গবেষণার দাবি রাখে।