চলতি বছর হজ হবে কি হবে না- এমন শঙ্কার মাঝে হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় শেষ বারের মতো বাড়ানো হলো। আগ্রহী হজযাত্রীরা ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত হজের চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারবেন। এ নিয়ে চার বার নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হলো।
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি এম. শাহাদাত হোসাইন তসলিম বার্তা২৪.কমকে সময় বাড়ানোর কথা নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত সকল প্রাক-নিবন্ধিত ব্যক্তিসহ হজ গমনেচ্ছু যেকোনো ব্যক্তি নতুনভাবে একইসঙ্গে প্রাক-নিবন্ধন ও চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে পারবেন। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার প্রাক-নিবন্ধনের সর্বশেষ ক্রমিক নম্বর ৬ লাখ ৭২ হাজার ১৯৯ পর্যন্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ‘আগে আসলে, আগে নিবন্ধন করা হবে’ ভিত্তিতে নিবন্ধন করতে পারবেন। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের সুবিধার্থে আগামী ২৯ এপ্রিলের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন কেন্দ্রে পাসপোর্ট দাখিল করতে হবে।
২ মার্চ থেকে চলতি বছরের হজযাত্রীদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বর্তমানে উমরাযাত্রী প্রেরণ ও সৌদি আরবের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ। তবে পরিস্থিতি উন্নতি হওয়া সাপেক্ষে ২০২০ সালে হজযাত্রী প্রেরণের লক্ষ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে।
হজপালন নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে নিবন্ধন করে যাচ্ছেন। হজের নিবন্ধন সার্ভারের তথ্যমতে, সরকারি-বেসরকারি মিলে মোট নিবন্ধন করেছেন ৫৪ হাজার ৪২১ জন। তন্মেধ্যে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধিত হজযাত্রীর সংখ্যা ৫১ হাজার ১৬ জন। আর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার ৪০৫ জন। এ বছর মোট হজযাত্রীর কোটা এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন।
সরকারি গণছুটি ও লকডাউনের মধ্যে হজ নিবন্ধন চালু রাখা হয়েছে। সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা থাকায় এবং নিবন্ধন কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে হওয়ার কারণে অফিস বা বাসায় বসেও নিবন্ধনের সুযোগ রয়েছে।
প্রতিবছর রমজানের আগেই হজের নিবন্ধন সম্পন্ন করার পর রমজানের মধ্যেই মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন করে থাকে এজেন্সিগুলো। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এবার এখন পর্যন্ত নিবন্ধনই সম্পন্ন হয়নি।
তাছাড়া সৌদি হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে পরবর্তী ঘোষণার আগ পর্যন্ত হজের অত্যাবশ্যকীয় সব কাজ বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করেছে। এই চিঠি পাওয়ার পরও ধর্ম মন্ত্রণালয় হজের নিবন্ধন সার্ভার চালু রেখেছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের যুক্তি হচ্ছে, এই নিবন্ধন কার্যক্রম ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব সার্ভারে হচ্ছে। এজেন্সিগুলোর নিজস্ব একাউন্টে হলেও এই টাকা হজের সুনির্দিষ্ট খাত ছাড়া ব্যয় করার সুযোগ বন্ধ। ফলে হজযাত্রীদের টাকার নিশ্চয়তা থাকছে। হজ স্থগিত হলে হজযাত্রীরা চাইলে এজেন্সির মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে নিতে পারবেন অথবা তার পরের বছরের হজের জন্য নিবন্ধিত হয়ে থাকতে পারবেন।
একাধিকবার বিভিন্ন সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ বলেছেন, হজে যেতে না পারলেও হজযাত্রীরা আর্থিকভাবে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, হাজীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
হজযাত্রীদের আশ্বস্ত করতে ধর্ম মন্ত্রণালয় বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এগুলো হলো- বর্তমান পরিস্থিতিতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় বিমান ভাড়া এবং সার্ভিস চার্জ বাবদ ১ লাখ ৫১ হাজার ৯৯০ টাকার অতিরিক্ত কোনো অর্থ নেওয়া যাবে না। অবশিষ্ট অর্থ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমা দেওয়ার জন্য হজযাত্রীকে প্রস্তুত রাখতে হবে।
নিবন্ধনের সময় হজযাত্রী এবং এজেন্সিকে আবশ্যিকভাবে নগদ লেনদেন পরিহার করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মধ্যস্বত্বভোগী বা তথাকথিত গ্রুপ লিডারের মাধ্যমে লেনদেন করা যাবে না।
নিবন্ধনের সময় হজযাত্রী কর্তৃক জমাকৃত অর্থ শুধুমাত্র হজ কার্যক্রমেই ব্যয় করতে হবে। নিবন্ধন ভাউচারের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। হজযাত্রী কর্তৃক এজেন্সির ব্যাংক হিসাব ব্যতীত কোনোভাবে নগদ লেনদেন করা হলে এজন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।
নিবন্ধনের জন্য জমাকৃত অর্থ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ব্যতিরেকে কোনো অবস্থাতেই উত্তোলন করা যাবে না। পরবর্তী নির্দেশনা প্রদান না করা পর্যন্ত সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া বা অন্যকোনো খাতে ব্যয়ের জন্য অর্থ প্রেরণ করা যাবে না এবং বাংলাদেশেও বিমান ভাড়া বা অন্য খাতে অর্থ ব্যয় করা যাবে না।
বিদ্যমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে হজযাত্রী প্রেরণ করা সম্ভব না হলে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে জমাকৃত অর্থ হজযাত্রী বরাবর ফেরৎ প্রদান করতে হবে।