হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির ও হাটহাজারী মাদরাসা মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন দেশের সর্বজনমান্য প্রবীণ এই আলেমের জ্ঞান সোমবার (৮ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফিরে আসে।
রোববার (৭ জুন) রাত সোয়া ৮টায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালের আইসিইউতে তাকে ভর্তি করানো হয়। রোববার সন্ধ্যায় তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৮৬ এর নিচে নেমে আসে। ফলে আল্লামা শফীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, তবে সোমবার সকাল থেকে তার শ্বাসকষ্ট কমে আসে।
চমেক হাসপাতালের আইসিইউর সহযোগী অধ্যাপক হারুনুর রশিদ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আল্লামা শফীর জ্ঞান ফিরে আসে। জ্ঞান ফেরার পর তিনি প্রথমে চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য দোয়া করেন। তাদেরকেও তিনি তার জন্য দোয়া করতে বলেন।
এর আগে আল্লামা শফীর চিকিৎসার বিষয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার দুপুর ১২টায় চমেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান রঞ্জন কুমার নাথ ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান সুজত পালের নেতৃত্বে এই মেডিকেল বোর্ড বৈঠকে বসে। বোর্ডের পরামর্শে আল্লামা শফীর বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়, কিন্তু তাতে খারাপ কিছু আসেনি।
আল্লামা শফী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট এবং হজমজনিত সমস্যায় ভুগছেন। তাকে রাইস টিউব (নাকে নল) দিয়ে শুধু তরল খাবার খাওয়ানো হচ্ছে।
এর আগেও কয়েকবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আল্লামা শফী। সর্বশেষ ১১ এপ্রিল বিকেলে হঠাৎ বমি ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাকে চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ১৪ এপ্রিল দুপুরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে তিনি ১২ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার উন্নতি হলে ২৬ এপ্রিল তাকে হেলিকপ্টারযোগে হাটহাজারী মাদরাসায় নিয়ে আসা হয়। এর পর থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করছিলেন।
আল্লামা শফীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার বিষয়টি তার ছেলে মাওলানা আনাস মাদানিও জানিয়েছেন। সোমবার রাতে বার্তা২৪.কমকে বলেন, হুজুরের অবস্থা গতকালের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তিনি কথা বলতে পারছেন, তবে আইসিউউতে রয়েছেন। তিনি পিতার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান এবং কোনো ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করেন।
এর আগে সোমবার বিকেলে আল্লামা শফী ইন্তেকাল করেছেন মর্মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু পোস্ট প্রচার হলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এটা নিয়ে আল্লামা শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ ফেসবুক লাইভে এসে বক্তব্য দেন। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক মুফতি ফয়জুল্লাহসহ অনেকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আল্লামা শফীর শারীরিক অবস্থা উন্নতি হয়েছে বলে জানান, তাতে বিভ্রান্তি কাটে। যতবারই আল্লামা শফী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, ততবারই একটি চিহ্নিত চক্র তার মৃত্যুর গুজব ছড়ায়।