ইসলামের বিধানমতে, আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জীবনে একবার হজপালন করা বাধ্যতামূলক তথা ফরজ ইবাদত।
কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে চলতি বছর হজ পালিত হবে কিনা তা নিয়ে সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যেই হজ বাতিলকারী দেশের সংখ্যা বাড়ছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের হজযাত্রীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা এ বছর হজপালন করতে যাবেন না।
সিঙ্গাপুর সর্বপ্রথম হজ স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এরপর ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কম্বোডিয়া, সেনেগাল ও ব্রুনাই এই দলে যোগ দেয়।
এই দেশুগলোর মধ্যে রয়েছে সর্বোচ্চ মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত ইন্দোনেশিয়া। ওই দেশ থেকে সবার্ধিক হজযাত্রী হজপালনের সৌদি আরব গমন করেন। ভারত থেকে প্রায় ২ লাখ হজযাত্রী সৌদি আরব যান।
হজপালনের ক্ষেত্রে কোটাপদ্ধতির কারণে এসব দেশের মোট কোটা প্রায় ছয় লাখ ২০ হাজার। অর্থাৎ মোট হজপালনকারী মুসলিম নাগরিকদের শতকরা ৩০ ভাগ রয়েছেন এই দেশগুলোর হজযাত্রীর সংখ্যা।
বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশ যেমন- মিসর, মরক্কো, তুরস্ক, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, লেবানন ও বুলগেরিয়া বলেছে- এখনও তারা রিয়াদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। ফ্রান্সের মুসলিম ধর্মীয় নেতারা করোনা ঝুঁকির কারণে এ বছর হজ বাতিলের অনুরোধ জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সৌদি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা, কিন্তু কোনো সদুত্তর মিলছে না। ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত হলে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে মুসল্লি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ।
এ দিকে সৌদি আরবে হজের সেবাদাতা এজেন্সিগুলোর সংস্থা মুয়াচ্ছাসার এক কর্মকর্তা বলেছেন, শেষ মুহূর্তে যদি সৌদি আরব বলে- তারা হজের জন্য প্রস্তুত; তাহলে অনেক দেশই তাতে অংশ নিতে পারবে না।
নানা গুঞ্জন থাকলেও করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে চলতি বছর হজ পালিত হবে কিনা তা নিয়ে এখনও সৌদি আরব কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। গত মার্চ মাসে সৌদি আরবে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর উমরা পালন বন্ধ করে দেয় রিয়াদ। সেই সঙ্গে কাবা শরিফ জিয়ারত বন্ধ ও দেশের সব মসজিদে জামাত ও জুমা স্থগিত করা হয়।
পরবর্তীতে স্বাস্থ্যবিধিসহ বেশকিছু শর্তের ভিত্তিতে মক্কা অঞ্চলের বাইরে মদিনার মসজিদে নববীসহ দেশের অন্য প্রদেশের মসজিদগুলো খুলে দেওয়া হয় ৩১ মে থেকে।
আর মসজিদের হারাম বাদে মক্কা অঞ্চলের মসজিদগুলো জামাতের উন্মুক্ত করা হয় ২১ জুন ফজরের নামাজের ওয়াক্ত থেকে। হজ ও মসজিদের হারামের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি দেশটি।
সৌদি সূত্র মতে, ২০১৯ সালে অন্তত ২৫ লাখ মুসলমান হজপালন করেছেন। চলতি বছর চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৮ জুলাই থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার কথা।
অবশ্য সৌদি সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, সৌদি কর্তৃপক্ষ এবারের হজ বাতিল কিংবা সীমিত সংখ্যক মুসল্লিদের নিয়ে আয়োজনের চিন্তা করছে। সৌদি হজ মন্ত্রণালয় বলছে, সবধরনের প্রস্তাব বিবেচনার পাশাপাশি হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।