কিন্তু আপনি পরিচিত এবং কাছের এমন কাওকে পাচ্ছেন না যার সাথে সবকিছু মন খুলে বলতে পারবেন, স্বস্থির নিঃশ্বাস নিতে পারবেন বা কারোর কাছ থেকে কোন সমাধান পাবেন। হয়তো বা কাছের সকল আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব বা পরিচিত বড় ভাই-বোন এর মাঝে কোন একজনের সাথে হটাৎ কথা বলে মনে হলো ‘এই মানুষটার সাথে সবকিছু খুলে বলা যায়, এই মানুষটা হয়তো আমাকে, আমার সমস্যা কে বুঝতে পারবে, হয়তো কোন একটা সমাধানও দিতে পারবে’।
একদিন বেশখানিকটা সময় হাতে নিয়ে দুজনে কফির কাপে আড্ডা দিতে দিতে নিজের সমস্যার কথাগুলো তার সামনে তুলে ধরতে লাগলেন। কিন্তু, তার দিক থেকে যেমন আচরণ আপনি আশা করেছিলেন ঠিক তার বিপরীত কিছুই ঘটতে শুরু করলো সময়ের সঙ্গে। আপনার প্রথম কয়েকটা কথা শুনেই আপনাকে থামিয়ে দিলো একরাশ বিরক্তি নিয়ে। আপনার আর কোন কথা না শুনেই সে শুরু করলেন তার মতো করে আপনাকে, আপনার পরিস্থিতি ও সমস্যা কে বিচার করা। আপনার সমস্যার সাথে অমুক তমুকের, অমুক সমস্যা তমুক সমস্যার সাথে তুলনা করা। কে কতটা কষ্টে আছে এবং আপনি কেনো এতো ছোট সমস্যা নিয়ে চিন্তিত সেটা নিয়ে কটাক্ষ করা। যেখানে হওয়ার কথা ছিল ঠিক বিপরীত। নিজের সমস্যাগুলো নিয়ে দিশেহারা আপনি হতবাক হয়ে আরো চুপসে গেলেন।
উপরের ঘটনাটি কমবেশি আমাদের সকলের সাথেই কি হয় না? হয়তো কোন সময়ে আমরা সমস্যাযুক্ত মানুষটির ভূমিকায় থাকি অথবা কখনো বেশী বোঝা মানুষটির ভূমিকায়। আমরা কারোর কোন সমস্যা বা ঝামেলার কথা শুনতেই প্রস্তুত নই। আমরা সবসময় সকলকে নিজের মাপকাঠি দিয়ে মাপতে প্রস্তুত।
অথচ আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজের মতো করে নিজেদের জীবন যাপন করছি। যে কারনে আমাদের কারোর সমস্যার সাথে অন্য কারোর সমস্যাগুলো মিলবে না এবং এটাই স্বাভাবিক। আরেকজনের সমস্যা অনেক বড় বলে আমার সমস্যাগুলো যে একেবারেই অর্থহীন, সেটা মোটেও নয়। কারন আমার জীবনের সমস্যা অন্য কারোর জীবনের সমস্যার তুলনায় অনেক ছোট হলেও একমাত্র আমি-ই জানব তা আমার জীবনে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে।
আমরা যদি এতোটুকুও সহনশীল হতে পারি যে- অপর ব্যক্তির সমস্যাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনব, নিজের মনের মত করে তাকে বিচার করব না, তার সমস্যাগুলো নিয়ে তাকে হেয় করব না এবং কোন সমাধান দিতে না পারলেও তাকে মানসিকভাবে সাহস দিব; শুধুমাত্র এতোটুকু করেও কিন্তু আমরা একজন সমস্যাগ্রস্থ মানুষকে অনেকটা সাহায্য করতে পারি।
কিন্তু এতটুকুও আমরা কতজন বুঝি বা কতজন করি? অথচ নিজে যখন কোন সমস্যার সম্মুখীন হই তখন খুব হতাশ হয়ে বলা শুরু করি, ‘আমাকে কেও বোঝে না’। এই ‘আমি’ যদি আজকে থেকে অপর কে, অপরের সমস্যা কে বুঝতে শুরু করি, তাহলে হয়তো সামনের দিনে এই আমাকেও কেও একজন বুঝবে, সাহস দিবে, আমার সমস্যাগুলো কে মোকাবিলা করতে আমার পাশে থাকবে। তাই শুরুটা নিজের থেকেই হোক তবে।