আপনার শরীরে গোপনে কোনও কঠিন রোগ বাসা বাঁধছে না তো? বলে দিতে পারে আপনার জিভ। জিহ্বা বা জিভের রঙ আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক ধারণা দিতে পারে। জিভের সামান্য পরিবর্তনও অনেক কিছুর ইঙ্গিত দেয়। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরাও রোগীর জিহ্বার রঙ ও আকার দেখে রোগ নির্ণয় করেন, শারীরিক সমস্যা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন।
আমরা অনেকেই জিহ্বার দিকে সঠিক নজর দিই না। প্রতিদিন জিভ পরিষ্কার রাখলে অনেক রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। তাই প্রতিদিন দাঁত মাজার সময়ই ভালো করে জিভ পরিষ্কার করুন। দাঁত ব্রাশ বা জিভ পরিষ্কার করার সময় আপনি নিজেই আপনার জিভ পরীক্ষা করে জানতে পারেন যে, আপনার মধ্যে কোনও রোগে আক্রান্ত কিনা!
তাহলে এবার জেনে নিন কোন রঙের জিভ, কোন কোন রোগের ইঙ্গিত দেয়।
স্বাভাবিক জিহ্বার রঙ
সাধারণত সব মানুষের জিহ্বার রঙ হালকা গোলাপি রঙের হয়। আপনার জিভের রঙ যদি হালকা গোলাপি রঙের হয় এবং জিভের ওপর যদি পাতলা সাদা একটি আস্তরণ থাকে, তা হলে বুঝবেন হজমে কোনও সমস্যা নেই। পরিপাকতন্ত্র ঠিকমতো কাজ করছে। জিহ্বা মূলত আমাদের পরিপাকতন্ত্রের খবরাখবর জানায়। কারণ জিভ থেকেই এই তন্ত্রের শুরু।
সাদা জিহ্বা
জিভের উপর সাদা রঙের আবরণ তৈরি হলে বুঝবেন শরীরের কোনও সমস্যা দেখা দিয়েছে। শরীরের আর্দ্রতা হ্রাস পেলে জিভের উপর সাদা রঙের পুরু আস্তরণ পড়ে যায়। পনিরের মতো জিভের মধ্যে সাদা স্তর পড়লে লিউকোপ্লাকিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কখনও কখনও ফ্লু দেখা দিলে এমন অবস্থা হয় জিভের।
হলুদ জিহ্বা
হালকা গোলাপী থেকে জিভের রঙ যদি হলুদ রঙের হয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন শরীরে পুষ্টির ঘাটতি রয়েছে। হজমতন্ত্রের সমস্যা, লিভারের সমস্যা কিংবা পেটের সমস্যার জন্য জিভের রঙ হলুদ হয়ে যায়। এমন কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ার আগে জিভের রঙ ধীরে ধীরে হলুদ আকার ধারণ করে। মূলত জ্বর হলে জিভের ওপর হলুদ আস্তরণ পড়ে। দেহের তাপমাত্রা অনেক কারণে বাড়তে পারে। সেটা ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে, শরীরের কোনও অংশ ফুলে গিয়ে থাকতে পারে।
বাদামি রঙের জিহ্বা
অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যাফাইন খেলে অনেকেরই জিভ বাদামি আকার ধারণ করে। ধূমপান করলেও ঠোঁট ও জিভের রঙ বদলে বাদামি হয়ে যায়। ধূমপান, কফি খাওয়ার ফলে অনেকেরই জিভের রঙ সারা জীবনের মতো বাদামি হয়ে যায়।
কালো রঙের জিহ্বা
চেইন স্মোকারদের জিভের রঙ সাধারণত কালো হয়। যদি ধূমপান না করেও জিভের রঙ কালো হয়, তাহলে বুঝবেন আপনার শরীরে ক্যানসারের মতো মারণ রোগ বাসা বাধছে। এছাড়া ফাঙ্গাল ইনফেকশন, মুখ পরিস্কার না করার ফলে জিভের রঙে কালো হয়ে যায়। সাধারণ কারও কারও জন্ম থেকেই এ রকম রং থাকতে পারে। তবে যদি হঠাত্ কালো রং দেখেন তা হলে বুঝবেন এক সঙ্গে বিপুল পরিমাণ ব্যাক্টেরিয়া জমা হয়েছে জিভে। তবে শুরু থেকেই এমনটা হবে না, প্রথমে হলুদ, তার পরে ব্রাউন, তার পর কালো রং হবে।
লাল রঙের জিহ্বা
যদি হঠাৎ করে জিভের রঙ লাল হয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন স্বাস্থ্যের সমস্যা তৈরি হয়েছে। শরীরে ভিটামিন ডি ১২ বা ফলিক এসিডের ঘাটতি হলে এমনটা হয়ে থাকে। যদি জিভের মধ্যে লাল লাল ছোপ দেখা যায়, তাকে বলে জিওগ্রাফিক এর অর্থ শরীরে এনার্জি বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। কোনও অ্যালার্জির কারণেও এমনটা হতে পারে। চর্মরোগ, র্যাশ প্রভৃতি রোগের লক্ষণ হতে পারে। প্রথমে জিভের ডগার দিকটাই লাল থাকবে। পরে তা পুরো জিভে ছড়িয়ে পড়বে।
নীল রঙের জিহ্বা
দীর্ঘ দিন ধরে শরীরে কোনও সমস্যা থাকলে জিহ্বার রং পার্পল হতে শুরু করেন। এটার অর্থ শরীরে ভিটামিন বি-এর ঘাটতি রয়েছে। মনে রাখবেন, শরীরে অক্সিজেনের অভাব হলে জিভের রং পাল্টে গিয়ে নীল বর্ণ হতে থাকে। ডাক্তারি ভাষায় একে সায়ানোসিস বলে। যদি এমনটা দেখেন অবিলম্বে চিকিত্সকের কাছে যান। রক্তে সমস্যা, হৃদযন্ত্রের সমস্যার মতো রোগ থাকতে পারে। তাই দেরি করা ঠিক নয়।
তথ্যসূত্র- টিভি৯ বাংলা