শরীরের সার্বিক কাজ সম্পাদনের জন্য স্বাভাবিকভাবেই নানারকম ভিটামিন ও খনিজ উপাদান প্রয়োজন হয়। যেমন: ভিটামিন ‘বি’- কোষ ও স্নায়ুর জন্য প্রয়োজনীয়। দেহের শক্তির মাত্রা নির্ধারণে এর ভূমিকা রয়েছে। মাতৃত্বকালীন সময়ে এই উপাদানগুলো আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। কারণ মায়ের শরীরের থাকা উপাদানেই, শিশুর বেড়ে ওঠা নির্ভর করে। পুষ্টি উপাদানের অভাবে শিশুর বৃদ্ধি প্রভাবিত হয়। গর্ভধারণের পর প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন গর্ভবতী মহিলার শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব থাকে। যেমন- ফলিক এসিড, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন বি১২ এবং ভিটামিন ডি।
প্রয়োজনীয় এসব উপাদানের অনেকগুলোই আমাদের শরীর বেশি উৎপন্ন করতে পারে না। তাই খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে অন্য উপাদান থেকে আমরা তা গ্রহণ করি। এতে শরীরে এসব উপাদানের ঘাটতি পূরণ হয়। সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ মায়েরা এসব উপাদানের অভাব পূরণ করতে পারছে না। এতে মা এবং শিশু উভয়ের শরীরেই ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
এই বিষয়ে ওয়্যার এজেন্সি ফিডে একটি গল্প ছাপানো হয়। তারা যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর এবং নিউজিল্যান্ডের কিছু গর্ভবতী নারীদের উপর একটি গবেষণা চালিয়েছে। ১৮ থেকে ৩৮ বছর বয়সী ১৭'শ জনের বেশি নারীদের নিয়ে জরিপ করা হয়। তাদের গর্ভাবস্থার আগে এবং পরবর্তী সময়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।
সেখানে দেখা যায়, গর্ভাবস্থার আগে শতকরা ৯০ ভাগ নারীর রক্তে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো কম ছিল। যেমন- ফলিক অ্যাসিড, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন বি১২ এবং ভিটামিন ডি-সহ ইত্যাদি৷ এই ভিটামিনগুলো গর্ভাবস্থায় মায়ের জন্য প্রয়োজন। কারণ, গর্ভের শিশুর বিকাশ নির্ভর করে এসবের উপর।
গবেষণার পরবর্তী ধাপে, বিচ্ছিন্নভাবে অংশগ্রহণকারীদের দু’টি দলে ভাগ করে নেওয়া হয়। এই পর্যায়ে গর্ভাবস্থার সাপ্লিমেন্টের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য এক দলের নারীদের শুধু ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। অন্য দলের নারীদের উন্নত সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। সেখানে ফলিক অ্যাসিড, রাইবোফ্লাভিন, ভিটামিন বি৬, বি১২ এবং ডি- রয়েছে। ফার্মেসী বা সুপারমার্কেট থেকে কেনা ঔষধের সমপরিমাণ ভিটামিন রাখা হয়েছে এই উন্নত সাপ্লিমেন্টে ৷ উভয় দলের নারীরা গর্ভধারণের আগে থেকে শিশুর জন্ম অবধি প্রতিদিন ওষুধ সেবন করেন।
পরীক্ষায় দেখা যায়, রক্তে ভিটামিনের মাত্রা উন্নত করতে সাহায্য করেছে উন্নত সাপ্লিমেন্ট। গর্ভাবস্থায় ভিটামিনের অভাবের প্রকোপ কমতে থাকে। বিশেষ করে রাইবোফ্লাভিন, বি৬ এবং ডি জাতীয় ভিটামিনের। পাশাপাশি ফলিক অ্যাসিডের মাত্রাও বাড়ে। তবে অন্যান্য ভিটামিনের মাত্রা আরও খারাপ হতে থাকে। সম্ভবত গর্ভাবস্থায় চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এমন হয়।
গর্ভাবস্থায় রাইবোফ্লাভিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাবে রক্তকণা কমে অ্যানিমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। স্ট্যান্ডার্ড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণকারীদের গর্ভাবস্থার পরবর্তী সময়গুলোতে বি৬ এর পরিমাণ কমে যায়। অর্থাৎ এই ভিটামিন যথেষ্ট পরিমাণে নেই। আগের গবেষণায় জানা যায় ভিটামিন বি৬ এর অভাবে বমির সমস্যা হয়। এর পর্যাপ্ততা, বমি বমি ভাব এবং বমি থেকে উপশম দিতে পারে।
উভয় দলের নারীদের হোমোসিস্টাইনের ঘাটতি দেখা গেছে। বিশেষ করে স্ট্যান্ডার্ড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণকারীদের মধ্যে এটি একটি ভালো লক্ষণ। উচ্চ হোমোসিস্টাইনের মাত্রা গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে ক্ষতি করতে পারে। এর প্রভাবে প্রিক্ল্যাম্পসিয়া সহ গর্ভাবস্থার বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও উন্নত সাপ্লিমেন্টের আরও একটি ভালো দিক হলো নারীদের শরীরে ভিটামিন বি১২ এর মাত্রা বাড়ে। এমনকি শিশু জন্মের ৬ মাস পরও শরীরে এই ভিটামিনে অভাব দেখা যায়নি। যা অত্যন্ত উপকারী ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন বি১২ শিশুর মস্তিষ্কগঠন ও বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে। তাই বুকের দুধের মাধ্যমে মায়ের শরীর থেকে শিশু এই উপাদান পাবে।
উন্নত ভিটামিন সমৃদ্ধ এই সাপ্লিমেন্ট নিয়ে ভবিষ্যতের আরও গবেষণায় করা হবে। এখনো পর্যন্ত এই সাপ্লিমেন্টের ইতিবাচক প্রভাবই বেশি। যেমন, উন্নত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণকারী নারীদের সময়ের আগে ডেলিভারি হওয়ার হার সম্ভাবনা কম। এক সাথে, সন্তান প্রসবের পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঝুঁকিও কম থাকে। তবে বিশ্বব্যাপী গর্ভবতী মায়েদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস