শরীর বিশুদ্ধকরণে বিভিন্ন অঙ্গ যেভাবে কাজ করে
শরীর শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া বা ডিটক্সিফিকেশন সিস্টেম একটি জটিল প্রক্রিয়া। যকৃত, বৃক্ক, সংবহনতন্ত্র, ফুসফুস, ত্বক এবং অন্ত্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরিশুদ্ধের প্রক্রিয়া চলতে থাকে সারারাত।
শরীরের ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গে কীভাবে এই কার্যক্রম ঘটে, তা নিয়ে বিবরণ দিয়েছেন ভারতের পুষ্টিবিদ আশ্লেষা জোশী। রাতের ঘুম ভাঙার পর সকাল সকাল উঠে লেগে পরতে হয় কাজে। সারাদিনের সব কাজ গুছিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা সেরে নিতে হয় দ্রুত। দিনের শুরুটা সুন্দর হলে সারাদিনই ভালো কাটে। বিশেষ করে শরীরের সকল কার্যপ্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখা খুবই জরুরি।
যকৃত বা লিভার: জীবিত প্রাণির দেহে অনবরত বিষাক্ত পদার্থের শারীরবৃত্তীয় বা ঔষধি অপসারণ প্রক্রিয়া (ডিটক্সিফিকেশন) চলতে থাকে। যকৃত হলো ডিটক্সিফিকেশন কাজের কেন্দ্রীয় অঙ্গ। রক্তকে ফিল্টার করে টক্সিনকে পানিতে দ্রবণীয় আকারে বিপাক করার প্রক্রিয়া পরিচালনা করে লিভার। এরপর সেই দূষিত টক্সিন পদার্থ প্রস্রাব বা মলের মাধ্যমে নির্মূল করার জন্য পিত্ত বা রক্তে ক্ষরিত হয়।
বৃক্ক বা কিডনি: বৃক্ক মানব শরীরের রেচন অঙ্গ। বর্জ্য এবং অতিরিক্ত তরল অপসারণ করতে রক্ত ফিল্টারকরণ হয় কিডনিতে। এরপর মূত্র বা প্রস্রাব হিসাবে শরীর থেকে নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য নির্গত হয়। কিডনির কাজ যেন সঠিকভাবে চলে, সেজন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অন্ত্র এবং অণুজীব: পাচনতন্ত্র মলের মাধ্যমে শরীরের বর্জ্য নির্মূল করে। অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকারক পদার্থকে নিষ্ক্রিয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্ত্র এবং এসব ক্ষুদ্র অণুজীবের কাজ যেন সঠিকভাবে সম্পাদিত করতে তন্তুজাতীয় বা ফাইবার খাবার অপরিহার্য।
সংবহনতন্ত্র: সেলুলার বর্জ্য সংগ্রহ এবং অপসারণের কাজ করে সংবহনতন্ত্র। সংবহন এবং নিঃসরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে সরবরাহিত হয়। এই সামগ্রিক প্রক্রিয়া শারীরিক ক্রিয়াকলাপের কার্যকারিতা বজায় রাখার মূল চাবিকাঠি।
ফুসফুস এবং ত্বক: কোষের কাজ শেষ হওয়ার পর ফুসফুস উৎপাদিত অপ্রয়োজনীয় কার্বন-ডাই-অক্সাইড শরীর থেকে বের করে দেওয়ার কাজ করে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড শরীরের বিপাকীয় বর্জ্য পণ্য। অন্যদিকে ত্বক ঘামের মাধ্যমে দ্রবণীয় বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে দূর করে দেয়।
ডাক্তার আরও জোশী বলেন,‘ শরীর সারারাত ধরে সক্রিয়ভাবে বিষাক্ত পদার্থকে বিপাক করে বর্জ্যে রূপান্তর করে। এইকাজ ভালোভাবে হওয়ার জন্য পানি এবং ফাইবার জাতীয় খাবার প্রয়োজন। বের করার জন্য সকালকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। সকালে কর্টিসল এবং এনজাইমেটিক কাজ সর্বোচ্চ গতিতে চলতে থাকে। এরফলে শরীর বিশুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় হজমশক্তি এবং শক্তি উৎপাদন বাড়েও সকালবেলাতেই। তাই রাতে বিশ্রাম শেষে নতুন দিন শুরু করতে শরীরকে পুনরায় চালু করতে হয়। প্রাকৃতিক ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করার জন্য সকালবেলা হলো উপযুক্ত সময়।’
তথ্যসূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস