ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় কফি খুবই জনপ্রিয়। অনেকে মনে করেন সকালে কফি পান করে দিন শুরু করলে সারাদিন বেশ সতেজতায় কাটে। গরম হোক বা ঠান্ডা, কফির মধ্যে থাকা ক্যাফেইন উপাদানের প্রভাবে হরমোনে কিছু পরিবর্তন আসে। ফলে ঘুম ঘুম ভাব কেটে গিয়ে, সতেজ অনুভব হয়। কিন্তু কেন কফি পান করার পর এরকম হয়?
আমাদের ঘুম-জাগরণ চক্র দেহঘড়ি, অর্থাৎ সার্কাডিয়ান রিদমে চলে। কর্টিসল এবং এপিনেফ্রিনের মতো কিছু হরমোন আছে, যার নিঃসরণও এই সার্কাডিয়ান রিদমের অংশ। এই হরমোনগুলোর ইন্দ্রিয়কে সতর্ক এবং একাগ্রচিত্ত হতে সাহায্য করে। কফি এই সার্কাডিয়ান রিদমকে সরাসরি প্রভাবিত করে। যেমন:
১. অ্যাডেনোসিন: কফিতে থাকা ক্যাফেইন মস্তিষ্কের অ্যাডেনোসিন রিসেপ্টরকে আটকে ফেলে। এই অ্যাডেনোসিন মূলত ভালো ঘুমের ক্ষেত্রে সাহায্য করে। এই কারণে কফি পান করলে ঘুম কেটে যায়। এই কারণেই কখনো সন্ধ্যা বা রাতে কফি পান করতে হয় না। তাহলে ঘুম-জাগরণ চক্র ব্যাহত হয়।
২.মেলাটোনিন: সার্কাডিয়ান রিদমকে নিয়ন্ত্রণ করে মেলাটোনিন হরমোন। ক্যাফেইন মেলাটোনিন নিঃসরণে বাধা দেয়। এই কারণে দেখা যায় অনেকে দেরী করে কফি পান করায় রাতে ঘুমানো কঠিন হয়ে পড়ে।
৩. দেহঘড়ি: আমাদের শরীরের কার্যক্রমের ভিত্তিতে দেহঘড়ির সময়সূচি ঠিক করে রাখে। মূলত এই ফাংশন মস্তিষ্কে গড়ে ওঠে। বাহ্যিক কিছু কারণে বাঁধাগ্রস্থ হলে এই ফাংশন বাঁধা পায়। তীব্র আলো, প্রতিদিনের রুটিনে পরিবর্তন সহ কফিও এই বাঁধার কারণ হতে পারে। এই সমস্যা তীব্রতর আকারও ধারণ করতে পারে, যদি ঘুমের প্যাটার্ন এবং নিত্যকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
যদিও প্রত্যেকের ক্ষেত্রে এই একইরকম প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। একেকজনের ক্ষেত্রে কফি পান করার প্রভাব ভিন্নও হতে পারে। তবে কফি পান করার ফলে ঘুমের ব্যাঘাত হওয়া প্রতিরোধে এই সতর্কতা গুলো অবলম্বন করতে পারেন-
১. ঘুমের সময় বা এর আশে পাশে সময়ে কফি বা ক্যাফিনেটেড কোনো পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন।
২. দিনভর অতিরিক্ত মাত্রায় কফি পান করবেন না। বিশেষ করে দুপুরের খাবার খাওয়ার পর থেকে কফি পানের পরিমাণ কমিয়ে আনুন।
৩. নিজের শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী কফি পানের পরিমাণ নির্ধারণ করুন। কিছু রোগের রোগীকে বা শারীরিক কিছু কারণে চিকিৎসকরা কাউকে কফি কমিয়ে পান করতে বললে, সেই নির্দেশনা মেনে চলুন।
৪. ঘুমানোর সময় কফি পান করবেন না। সম্ভব হলে যে সময় ঘুমাতে যান, তার ৬ ঘণ্টা আগে থেকেই কফি গ্রহণ বন্ধ করুন।
৫. যতই পছন্দ হোক না কেন, অতিরিক্ত মাত্রায় কফি পান এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে কোনো শারীরিক অস্বস্তি হলে অবশ্যই পান করা বন্ধ করে দিন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।
তথ্যসূত্র: বেটারআপ