সার্বিকভাবে সুস্থ থাকতে শরীরের সঠিক ওজন ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরি। শরীরে চর্বি জমা ভালো লক্ষণ নয়। বিশেষ করে পেটের চর্বি নানারকম অসুবিধা ও রোগ সৃষ্টির কারণ হতে পারে। পেটে যখন চর্বি জমে তখন লিভার ও অন্ত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে ঘিরে ফেলে। এতে এসব অঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এতে নানারকম রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
রিজিওনাল অ্যানেস্থেসিয়া এবং পেইন মেডিসিনে পেটের চর্বির ক্ষতিকর দিক নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, পেটের চর্বি কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত জীবনধারাকে সুন্দর করে তুলতে পারে। কারণ পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে গেলে তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে নারীরা এই ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, যে নারীদের পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে যায় তাদের দীর্ঘমেয়াদী পেশি এবং জয়েন্ট ব্যথা হয়। এই সমস্যা পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মূলত শারীরিক গঠন, হরমোনের প্রভাব এসব কারণে এই তারমতম্য দেখা যায়। পেটের চর্বি শুধু লিভার আর অন্ত্রকে ঘিরে রাখে তাই নয়! সাইটোকাইন নামের এক রাসায়নিক পদার্থও তৈরি করে। এই প্রদাহ বিভিন্ন হাড়ের জয়েন্ট এবং পেশিতে প্রদাহ সৃষ্টি হওয়ার কারণ। এই গবেষণায় ৩২ হাজার ব্যক্তির উপর পরীক্ষা চালিয়ে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ ছিলেন গড়ে ৫৫ বছর বয়সের নারীরা। সেই গবেষণায় পেটের চরি্ব কমানোর কিছু উপায়ও প্রকাশ করা হয়েছিল:
জীবনধারা: সুস্থ থাকতে শরীর সক্রিয় রাখার বিকল্প হয় না। ঘন ঘন শারীরিক কার্যক্রম করার ফলে অতিরিক্ত ক্যালরি এবং চর্বি দূর করা সম্ভব। এরজন্য আলঅদা করে ব্যায়াম করতে হবে, তেমনও নয়। হাঁটা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানোর মতো দৈনন্দিন জীবনের কাজের মাধ্যমেও শরীর সক্রিয় রাখা সম্ভব।
খাবার: শরীরে তথা পেটে চর্বি জমার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হলো খাদ্যাভ্যাস। সাধারণত শরীরের অন্যান্য জায়গার তুলনায় পেটে আগে চর্বি জমতে শুরু করে। এই সমস্যা এড়াতে যথাসম্ভব আস্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যেমন আস্ত ফল, সবজি, শস্যজাত খাবার ইত্যাদি। এছাড়া চর্বিযুক্ত মাংস, চিনিযুক্ত মিষ্টি খাবার, প্যাকেটজাত খাবার এসব খাবার খাওয়া কমিয়ে ফেলতে হবে।
মানসিক স্থিতি: পেটে চর্বি জমার পেছনের হরমোনের ভূমিকা রয়েছে। কর্টিসল নামক হরমোন এরজন্য দায়ী। মূলত মানসিক চাপে থাকলে এই হরমোনের প্রবাহ বেড়ে যায়। সেইজন্য মনস্থিতি শান্ত করার চর্চা করা প্রয়োজন। যোগাসন বা ধ্যানের মা্যেমে মনকে শান্ত করার চর্চা করতে হবে।
ঘুম: প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টার শান্তির ঘুমের মাধ্যমে মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে স্বাভাবিকের তুলনায় পেটে বেশি চর্বি জমতে শুরু করে।
পানি: শরীর ভালো রাখতে, যেকোনো ধরনের রোগ থেকে মুক্ত থাকার পূর্বশর্ত হলো পানি। আমাদের শরীরের শতকরা ৭০ ভাগ পানি, তাই পানি আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। হজম থেকে শুর করে চর্বি কমানো সব ক্ষেত্রেই পানি পান করার অভ্যাস প্রভাবশীল।
তথ্যসূত্র: নিউজ১৮