নতুন একটি প্রাণের সঙ্গে পরিবারে আসে নতুন আনন্দ। নবজাতক শিশু জন্মের পরপর হয়ে ওঠে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। তার নানাবিধ সুবিধা-অসুবিধাই সকলের চিন্তা-ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
আদুরে শিশুর সুস্বাস্থ্যও নিশ্চিত করতে নবাগতর বাবা-মা সহ পরিবারের সকলেরই সচেতন থাকা উচিত। সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুরা অনেক নাজুক হয়। তাদের ত্বক, শরীর, স্বাস্থ্য সবকিছু কোমল হাতে সামলাতে হয়। শিশু বয়সে কোনো রোগ বা শারীরিক ক্ষতি হলে তা শিশুর সম্পূর্ণ জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
মেনিনজাইটিস একটি গুরুতর শারীরিক অসুবিধা। মূলত মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের চারপাশের আবরণী মেমব্রেনে সংক্রমণের ফলে এই রোগ হয়। মেনিনজাইটিসের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো- জ্বর, ক্ষুধায় মন্দা, খিঁচুনি ইত্যাদি। সময়মতো শিশুদের এই লক্ষণগুলো পরিলিক্ষিত করে ব্যবস্থা না নিরে পরিস্থিতি গুরুতর হতে পারে।
শিশু যেন মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত না হয়, তাই শিশুকে রক্ষা করতে যা যা করতে পারেন-
গর্ভাবস্থা: অনেক সময় শিশু গর্বে থাকা কালে জ্বর বা ঠাণ্ডা লাগার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তার প্রভাব যেন শিশুর মধ্যেও সংক্রমিত না হয় সেজন্য মায়ের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। যত দ্রুত সম্ভব রোগ সারিয়ে তুলতে হবে, নয়তো গর্ভঠাণ্ডা শিশুর প্রাণে হুমকিস্বরূপ হতে পারে।
প্রসব: শিশু প্রসবকালে অসাবধনতার কারণে মায়ের শরীর থেকে শিশুর শরীরে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। আবার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে শিশুর শরীরে নানারোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই প্রসবের সময় শিশুর সার্বিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার খেয়াল রাখতে হবে।
শালদুধ: শিশুর জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব তাকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হয়। শিশুরা তরল ছাড়া অন্য কোনো খাদ্য গ্রহণ করতে পারেনা। তাছাড়া মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারী। শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদি্ধ পায়। বিমেষজ্ঞরা তাই প্রথম ৬ মাস মায়ের বুকের দুধ ছাড়া শিশুকে অন্য কোনো কিছু না খাওয়ানোর পরামর্শ দেন।
প্রতিরোধ: নবজাতকের কোনোরকম শারীরিক অসুবিধা পরিলক্ষিত হলে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়া বা এনআইসিইউতে নিবিড় চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
সাবধানতা: প্রিম্যাচিউর বাচ্চাদের গর্ভকালীন বৃদ্ধি সঠিকভাবে হয় না। তাই স্বাভাবিক শিশুর তুলনায় এদের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে। শিশুদের মেনিনজাইটিস সহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। এই কারণে প্রিম্যাচিউর শিশুদের ক্ষেত্রে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কোনো লক্ষণ দেখা না গেলেও চিকিৎসকের থেকে পরামর্শ নিন।
নবজাতক শিশু বিশেষ করে ১ থেকে ৩০ বা তার বেশি দিন বয়সের শিশুদের মধ্যেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। জন্মের পর নবজাতক শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই দুর্বল প্রকৃতির থাকে এবং বৃদ্ধি হতে থাকে। সেইজন্য শিশুদের এই রোগ হওয়া দীর্ঘস্থায়ী গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি থেকে শুরু করে মৃত্যুর কারণ অবধি হতে পারে।
শতকরা ২০ ভাগ নবজাতকদের মেনিনজাইটিস হতে দেখা যায়। এদের মধ্যে অধিকাংশ শিশু প্রি-ম্যাচিউর অর্থাৎ, নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই তাদের জন্ম হয়েছে। শিশুদের মধ্যে মেনিনজাইটিস সংক্রমণ প্রসবের সময়ও হতে পারে, আবার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের জন্যও হতে পারে। বেশিরভাগ মেনিনজাইটিস আক্রান্ত শিশুকে নিবিড় চিকিৎসায় রাখতে হয়। তবে শিশুরা অবুঝ, তাছাড়া কোনো অসুবিধা হলে কান্না ছাড়া অন্য কোনো বহিঃপ্রকাশ করতে পারেনা। তাই সামান্য তম অসুবিধার আঁচ পেলেও বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
তথ্যসূত্র: নিউজ১৮