শীতের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই অনেকের খুশকির সমস্যা দেখা দেওয়া শুরু হয়। খুশকি ক্ষেত্র বিশেষে সারাবছরও থাকতে পারে। বিরক্তির উদ্রেক তৈরিকারী মাথার ত্বকের এই সমস্যায় নারী-পুরুষ উভয়কেই ভুগতে হয়।
প্রায় সবাই এই কমন সমস্যাটিতে ভুক্তভোগী হলেও, খুশকির নানা ধরণ সম্পর্কে জানেন না অনেকেই। ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি কারণে মাথার ত্বকের এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মাঝে প্রধান চারটি কারণগুলো হলো-
সাধারণত যাদের ত্বক শুষ্ক তাদের মাঝে খুশকিজনিত সমস্যাটি বেশি দেখা যায়। শুষ্ক ত্বকের সমস্যাটি শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ায় ও নিয়মিত শ্যাম্পু না করার ফলে হতে পারে। এছাড়া যাদের চুল কোঁকড়া হয়ে থাকে তাদের মাথার ত্বক তুলনামূলক শুষ্ক হওয়ার দরুন খুশকির সমস্যাটি বেশি দেখা দেয়।
সিবাসিয়াস গ্ল্যান্ডস থেকে উৎপন্ন হয় এক প্রকারের প্রাকৃতিক তেল সিবাম (Sebum), যা আমাদের মাথার ত্বক ও চুলকে অতিরিক্ত শুষ্ক হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে। তবে কিছু মানুষের শরীরে সিবাম প্রয়োজনের চাইতে অনেক বেশি উৎপন্ন হয়। এমনটা সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালীন ও গর্ভধারণের ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত মানসিক চাপজনিত অথবা অনিয়মিত শ্যাম্পু করার ফলে হয়ে থাকে। এই অতিরিক্ত সিবাম ত্বকের মরা চামড়া ও বাইরের ধুলাবালির সংস্পর্শে এসে খুশকি তৈরি করে।
মাথার ত্বকে চুলের গোড়ায় ম্যালেসেজিয়া গ্লোবোসা (Malassezia globosa) নামক এক ধরনের ইনফেকশন থেকে ফাংগাল খুশকির সমস্যাটি দেখা দেয়। বিশেষত মাথার ত্বকের pH এর মাত্রায় অসামঞ্জস্যতা দেখা দিলে এই ফাংগাল ইনফেকশন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পরে। এছাড়া ফাংগাল ইনফেকশনটি ছোঁয়াচে হওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিরুনি, তোয়ালে, গামছা, টুপি ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমেও সংক্রমণের ঝুঁকি দেখা দেয়।
যারা দৈনিক চুলের স্টাইলে কয়েক ধরনের পণ্য ব্যবহার করেন, তাদের মাঝে খুশকিজনিত সমস্যাটিও বেশি দেখা যায়। কন্ডিশনার, জেল, সিরাম, মুজ, হেয়ার স্প্রেসহ অন্যান্য পণ্য মাথার ত্বকের উপরে সহজেই একটি আস্তরণ তৈরি করে। যা মাথার ত্বকের মরা চামড়া বা বাইরের ধুলাবালির সাথে মিশে খুশকি তৈরি করে।
সালফেটবিহীন শ্যাম্পুর ব্যবহার, কেমিক্যাল পণ্যের সীমিত ব্যবহার, জিংক ও ভিটামিন-বি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি খুশকির সমস্যা দূর করতে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারে বাড়তি যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খুশকির সমস্যায় চারটি সহজলভ্য প্রাকৃতিক উপাদান হলো-
দুই টেবিল চামচ মেথি পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে সারারাত এবং পরদিন সকালে মেথি বেটে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করে ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে এবং পরবর্তিতে পানিতে চুল ধুয়ে নিতে হবে।
খুশকির সমস্যায় অলিভ অয়েল খুব ভালো কাজ করে। যাদের মাথার ত্বক তৈলাক্ত, অলিভ অয়েল চুলে ম্যাসাজ করে ৩০-৫০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে এবং মাথার শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে সারারাত রেখে পরদিন শ্যাম্পু করতে হবে।
যেকোন ধরনের খুশকির সমস্যাতেই অ্যাপল সাইডার ভিনেগার খুব ভালো কাজ করবে। এর জন্য দুই কাপ পানিতে দুই চা চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে মাথার ত্বকে ঢেলে ধীরে ম্যাসাজ করে এরপর শ্যাম্পু করে নিতে হবে।
অন্যান্য সকল ধরনের এসেনশিয়াল অয়েলের মাঝে টি ট্রি অয়েলটি খুশকির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে। ব্যবহারের জন্য দুই টেবিল চামচ নারিকেল তেলের সাথে ৪-৫ টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে মাথার ত্বকে ভালোভাবে ১৫ মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর ঘণ্টাখানেক রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে।
আরও পড়ুন: চুলের যত্নে ব্যবহার করুন ঘরে তৈরি তেল
আরও পড়ুন: উফ খুশকি!