খুব সূক্ষ্মভাবে প্রতিটা মেয়ের মগজে ও মনে গেঁথে দেওয়া হয়- নারীদের হতে হবে একদম ‘পারফেক্ট’। এখনকার সময় ও সমাজ ব্যবস্থায় নিজস্বতার কোন স্থান নেই। মুখে যতই নীতির বুলি আওড়ানো হোক না কেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চাপা পড়ে যায় চোখ ধাঁধানো গ্ল্যামারের নিচে। তাইতো তথাকথিত ‘পারফেক্ট’ এর খাতায় টিক চিহ্ন ওঠাতে নিজেকে ভেঙ্গেচুরে গড়ে তুলতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন সকলেই।
বিভিন্ন টিভি প্রোগ্রাম, ফ্যাশান শো, ইউটিউবের ভিডিও কন্টেন্ট, বিলবোর্ড, ম্যাগাজিনের মডেলদের দেখে হা-হুতাশ বাড়ে সাধারণ নারীদের মাঝে। কী নিখুঁত সৌন্দর্য, কী নিখুঁত তাদের চুল, চোখ, ঠোঁট থেকে শুরু করে পুরো শারীরিক অবয়ব। আমরা ভুলে যাই, এই ‘নিখুঁত’ সৌন্দর্যের পেছনে রয়েছে হাজার ডলার দামের মেকআপ পণ্যের ব্যবহার। সাথে ফটোশপের কারুকাজ তো আছেই!
সৌন্দর্য- এই ব্যাপারটার বিশালতাকে এতোটাই সংকির্ণ ও সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে যে, তার বাইরে গেলে বা ব্যতিক্রম হলে সেটাকে আর গণ্য করা হয় না। আইভ্রু হতে হবে ঘন কালো ও সঠিক মাপে কাটা, চোখ হতে হবে টানাটানা বড়, ত্বক হতে হবে মোলায়েম ও নিখুঁত, ঠোঁট হতে হবে ঠিক কমলার কোয়ার মতো, চুলকে ছাড়িয়ে যেতে হবে কোমর, শারীরিক গঠন হতে হবে ছিপছিপে। তবেই না সৌন্দর্যের কথা আসে!
এই যে প্রচলিত ও গৎবাঁধা সৌন্দর্যের প্রত্যাশা, সেটা পুরোটাই আমাদের অতিকল্পনা প্রবণ মনের সৃষ্টি। মিডিয়াও এক্ষেত্রে তার দায় এড়াতে পারে না।
প্রিয়াঙ্কা আরো বলেন, ‘আমি বলছি না যে নার্সিসিস্ট হতে হবে। আমি বলছি মাঝে মাঝে নিজের জন্যেও কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হয়।’
নিজের ক্যারিয়ার জীবনের শুরুর কথা, গায়ের রঙের কথা, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ধরণ নিয়েও কথা বলেন তিনি। ‘সৌন্দর্য দর্শকদের দেখার উপর নির্ভর করে। সবার দৃষ্টিভঙ্গি কিন্তু একইরকম নয়। যে কারণে ভিন্ন ধরণের সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।’
একজন রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ, যাকে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘরে-বাইরে কাজ করতে হয়, সামান্য চুল আঁচড়ানোর জন্য সময় খুঁজে বের করতে হয় কিংবা মাসে একদিন অনাকাঙ্ক্ষিত অবসর পেলে ফেসিয়ালের পরিকল্পনা করতে হয়- তিনি কখনোই ম্যাগাজিনের মডেলের মতো ‘প্লাস্টিক পারফেক্ট’ হতে পারবেন না। কারণ জীবনটা টিভি পর্দার দশ মিনিটের কোন ভিডিও অথবা ম্যাগাজিনের পাতার এডিটেড ছবি নয়।
আসল সৌন্দর্যটা ফুটে ওঠে নিজের স্বকীয়তা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়া, আনন্দিত হওয়া ও গর্ববোধ করার মাঝেই।