প্রতিদিনের ব্যস্ততা ও কাজের চাপে নিজের জন্য আলাদাভাবে সময় বের করা কষ্টকর হয়ে ওঠে। এতে করে খুব সহজেই ভুলে যাওয়া হয়, নিজের জন্যেও যত্নের প্রয়োজন। এই যত্ন মানে ত্বক কিংবা চুলের যত্ন নয়, নিজের শরীর ও মনের যত্ন। প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান নিয়মিত খাওয়া, নিয়ম মেনে পরিমিত মাত্রা ঘুমানো, দুশ্চিন্তা কম করার মাধ্যমেই কিন্তু নিজের যত্ন নেওয়া সম্ভব হয়। সামান্য এই কাজগুলোর অনুপস্থিতিই এনে দিতে পারে শারীরিক নানা সমস্যা।
ঘুম থেকে ওঠার পর বেশ অনেকক্ষণ ঝিম ধরে থাকা, হাঁটতে গেলে কোন আসবাবের সাথে ধাক্কা খাওয়া কিংবা বাইরে বেরুনোর সময় প্রয়োজনীয় জিনিস ফেলে বেরিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলোকেই বলা হচ্ছে ব্রেইন ফগ। আমরা এটাকে সাধারণ সমস্যা মনে করলেও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও ফাংশনাল মেডিসিন এক্সপার্ট মার্টিন জি. ব্লুম জানাচ্ছেন, এমনটা হয়ে থাকে হরমোনাল ইমব্যালেন্সের ফলে। যা সরাসরি আমাদের মস্তিষ্কের উপর প্রভাব বিস্তার করে। এই সমস্যাটি মূলত ডিসফাংশনাল থাইরয়েডের সমস্যার নিদর্শন স্বরূপ দেখা দেয়।
অফিসের কাজ, পরিবার, বন্ধু, ব্যাক্তিগত কিংবা একেবারেই সাধারণ যেকোন বিষয়েই আমাদের কমবেশি মানসিক চাপের মুখে থাকতে হয়। যখনই আমরা মানসিক চাপে থাকি, আমাদের কর্টিসল হরমোন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে করে মুড পরিবর্তন হয়ে বিষণ্ণ, গম্ভীর ও অস্থিরতা দেখা দেয়। কর্টিসলের মাত্রা যত বেশি, ওজন বাড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় ঠিক ততখানি। এ থেকে আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং হতাশাবোধ জেঁকে বসে। এ কারণে যতখানি সম্ভব নিজেকে সকল প্রকার মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখা খুবই জরুরি।
সঠিক খাদ্যভাসের মতোই সুস্বাস্থ্যের জন্য পরিমিত মাত্রার ঘুম প্রয়োজন। কিন্তু যদি রাতে ঘুমাতে, সকালে ঘুম থেকে উঠতে সমস্যা হয় এবং দিনভর ঘুমভাব দেখা দেয় তবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ ঘুমের সমস্যার সাথে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের সমস্যা এবং বাড়তি ওজনের সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে কিছু হরমোনাল ইমব্যালেন্স দেখা দেয়। এর ফলেও ঘুমের প্যাটার্নে পরিবর্তন চলে আসে।
আমাদের দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে কম্পিউটার টেবিলের সামনে বসে। ফলে যখনই পেশীতে টান খাই বা মাসল স্প্যাজম দেখা দেয় আমরা ধরেই নেই দীর্ঘসময় বসে থাকার ফলে এমনটা হয়েছে। বসে থাকার ফলে এমনটা কিছুক্ষেত্রে হলেও, শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতির দরুনও এই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে বলে জানাচ্ছেন ক্যারিলন মিয়ামি ওয়েলনেস রিসোর্টের মেডিক্যাল ডিরেক্টর অ্যাডোনিস ম্যাকুয়েজ। এক্ষেত্রে তিনি ম্যাগনেসিয়ামপূর্ণ খাদ্য উপাদান তথা- কাজুবাদাম, মিষ্টি কুমড়ার বীজ ও কলা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন।
হুটহাট হাত কিংবা পায়ে অকারণে খচখচানি বা সূক্ষ্ম কোন কিছু বিদ্ধ হওয়ার মতো অনুভূতি দেখা দিতে পারে। তবে এই সমস্যাটি যদি নিয়মিত দেখা দেওয়া শুরু করে তবে সেটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শরীরে ভিতামিন-বি১২ এর ঘাটতি ও রক্তশূন্যতার ফলে এমনটা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে নিয়মিত ডিম, দুধ, কচু শাক, কলিজা ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
শীতকালীন সময়ে শুষ্ক ত্বকের সমস্যাটি দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু স্বাভাবিক শুষ্কতার চাইতেও অনেক বেশি শুষ্কভাব দেখা দিলে শরীরে ফাটাভাব তৈরি হয়। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারেও যে সমস্যাটি কমানো সম্ভব হয় না। এমন সমস্যায় চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যাভ্যাসে ফ্যাটি –অ্যাসিডের মাত্রা অতিরিক্ত কম হওয়ার দরুন ত্বকের শুষ্কতা দেখা দেয়। এই সমস্যাটি থেকে দূরে থাকার জন্য খাদ্যাভ্যাসে পর্যাপ্ত পরিমাণ উপকারী ফ্যাট সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদান রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: