বিলি রেজর: সামাজিক ট্যাবুকে ভেঙ্গে ব্যতিক্রমী অ্যাড নির্মাণ

বিবিধ, লাইফস্টাইল

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইফস্টাইল | 2023-08-27 16:30:51

 

একজন সুস্থ ও সাধারণ মানুষের শরীরে লোম (Body hair) থাকবে, যেটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে বর্তমান সময়ের সমাজ ব্যবস্থায় এটা স্বাভাবিক ব্যাপার শুধু পুরুষদের জন্য, নারীদের জন্য নয়। নারীদের শরীর হবে লোমবিহীন, মসৃণ ও কোমল।

প্রচলিত এই ধারণা ও ট্যাবুকে ভেঙে দিয়ে দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত বার্তা নিয়ে একটি অ্যাডভার্টাইজমেন্ট তৈরি করেছে রেজর ব্র্যান্ড ‘বিলি রেজর’। গেলো মাসের শেষে প্রকাশিত হওয়া এই অ্যাড ইতিমধ্যেই দারুণ জনপ্রিয়তা ও সুনাম কুড়িয়েছে নারীকুলের কাছ থেকে।

কী এমন দেখিয়েছে সেই অ্যাডে এবং কী ছিল সেই অ্যাডের বার্তায়? সাধারণত অন্যান্য সকল অ্যাডেই নারীদের একদম ‘প্লাস্টিক পারফেক্ট’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। অ্যাডে উপস্থিত থাকা নারীদের হাত-পা থাকে একদম লোমবিহীন, মসৃণ। যেন সেটাই স্বাভাবিক বিষয়। আসলেও কি সেটা স্বাভাবিক বিষয়? অবশ্যই নয়।

নারীদের শরীরেও লোম থাকে। সেই বিষয়টাকেই খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছে বিলি রেজর তার অ্যাডে। বলা হচ্ছে, বিগত ১০০ বছরের মধ্যে এটাই প্রথম লোমযুক্ত নারীদের নিয়ে তৈরি করা অ্যাড! 

এই অ্যাডভার্টাইজমেন্টে কয়েকজন নারীকে দেখা যায়। তাদের হাত, পা, পায়ের আঙ্গুল, আন্ডারআর্ম, জোড়া আইভ্রু ও তলপেটের লোম দেখানো হয়েছে এতে। সোশ্যাল মিডিয়া ইন্সটাগ্রামে কমেন্টকারী নারীরা যে ব্যাপারটা ‘সুন্দর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

খুব সাধারণভাবে প্রশ্ন আসতে পারে, একটি রেজর কোম্পানি কেন এমন ধরণের অ্যাড বানালো? এই অ্যাডে তো তাদের পণ্যের উপযোগিতার একেবারেই বিপরীত বার্তা উপস্থাপন করা হয়েছে। গ্ল্যামার ম্যাগাজিনের এমন প্রশ্নের মুখে চমৎকার উত্তর দিয়েছেন বিলি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা জর্জিনা গোলি, ‘অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠান যখন নারীদের লোমহীন শরীরকে উপস্থাপন করে, তখন ব্যাপারটা বডি শেমিং এর মতো হয়ে যায়। এর মাধ্যমে তারা আপনাকে বার্তা দিচ্ছে যে, নিজের শরীরের লোম নিয়ে আপনার লজ্জিত হওয়া উচিৎ। যদি আপনার কখনো মনে হয় যে আপনার শেভ করা প্রয়োজন, শুধু এবং শুধুমাত্র তখনই আমরা আপনাদের পাশে থাকব।’

আরো পড়ুন: ‘প্লাস্টিক পারফেক্ট’ নয়, আত্মবিশ্বাসী হওয়া প্রয়োজন

জর্জিনা আরো বলেন, ‘শেভ করা একান্তই ব্যক্তিগত একটি ব্যাপার। কারোরই নারীদের বলা উচিৎ নয়, তার শরীরের লোম নিয়ে কী করবে বা করবে না। কেউ হয়তো লোম রাখতে চান না, কেউ লোমকে আনন্দের সাথে রাখতে চান। পছন্দ যেমনই হোক না কেন, তার জন্য দুঃখিত হবার কিছু নেই।’

বিলি রেজরের এই অ্যাড দেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লেখিকা র‍্যাচেল হ্যাম্পটন জানান তার প্রতিক্রিয়া। ‘এটা সত্য যে জীবনের একটা পর্যায়ে এসে এখন আমিও অন্যান্যদের মতো লোমবিহীন মসৃণ পা কে উপভোগ করি। তবে নারীদের শরীরে লোম থাকা ঠিক নয়, এই মূল ভাবনাটা আমার ভেতর প্রবেশ না করলে আমি ১১ বছর বয়সে শেভ করা শুরু করতাম না।’

লেখিকার খুব সহজ ও সরল বক্তব্য থেকে পরিষ্কার ফুটে ওঠে, সমাজে নারীদের শরীরের লোমকে ‘ভুল’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। অল্প বয়সী মেয়েদের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, শরীরে লোম থাকা যাবে না। যার ফলে খুব সূক্ষ্মভাবে তাদের বাধ্য করা হয় শেভ করার জন্য, লোমবিহীন শরীর গড়ে তোলার জন্য। অথচ শারীরিক লোম খুবই ব্যক্তিগত একটি বিষয়।

মানসিক চাপ প্রয়োগ করে নারীদের শেভ করার দিকে ঠেলে দেওয়ার বিরোধিতা করেই বিলি রেজর তাদের অ্যাডটি নির্মান করেছে। প্রচলিত প্রথাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এবং সামাজিক ট্যাবুকে ভেঙ্গে নারীদের ব্যাক্তি স্বাধীনতা প্রকাশ করার বার্তায় নির্মিত অ্যাডটি যে কারণে সফল হয়েছে খুব সহজেই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর