শীতকাল একা আসে না, সে সাথে নিয়ে আসে বিভিন্ন ধরনের ঠাণ্ডাজনিত সমস্যাও। মৌসুমি এই সমস্যায় কমবেশি ভুগতে হয় সবাইকেই। সাধারণত ঠাণ্ডার সমস্যায় ওষুধ গ্রহণেও লম্বা সময়ের প্রয়োজন হয় সুস্থ হতে। এ সময়ে খুবই পরিচিত কিছু কাজ ঠাণ্ডার সমস্যাটিকে কমিয়ে আনতে পারে অনেকখানি।
ঠাণ্ডার সমস্যা দেখা দিলে প্রথমেই চেষ্টা করতে হবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার। যেহেতু ঠাণ্ডার সমস্যায় শরীর নাজুক হয়ে পড়ে, এই সমস্যা থেকেই দেখা দিতে পারে বড় ধরনের সমস্যা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘রয়েল সোসাইটি অব মেডিসিন’ এর তথ্য মতে এ সময়ে রোগপ্রতিরোধকারী খাদ্য উপাদান তথা- সাইট্রাস ফল, ব্রকলি, রসুন, আদা, কচু শাক, কাঠবাদাম, টকদই প্রভৃতি খেতে হবে। এছাড়া জিংক সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের প্রতিও জোর দিতে হবে। এতে করে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং ঠাণ্ডার সমস্যা কমে আসার পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
ঠাণ্ডার সমস্যার বিভিন্ন লক্ষণের মাঝে গলা ব্যথা অন্যতম। অনেক সময় এই গলা ব্যথা থেকেই কানে ও মাথায় ব্যথা দেখা দেয়। এ কারণে ঠাণ্ডার সমস্যা ও ব্যথাভাব তাৎক্ষণিকভাবে কমাতে গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গার্গল করা সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উপায়। ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার পালমোনারি, ক্রিটিক্যাল কেয়ার এন্ড স্লিপ স্পেশালিস্ট রাজ দাসগুপ্তা জানান, উষ্ণ লবন-পানির মিশ্রণ জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে, ব্যথা কমায় এবং আরামদায়ক অনুভূতি তৈরি করে। পুরনো দিনের এই কাজটি তাই আধুনিক সময়ে এসেও সমানভাবে কার্যকর ঠাণ্ডার সমস্যা কমানোর ক্ষেত্রে।
ক্যানজাত অথবা বাইরের যেকোন স্যুপেই অতিরিক্ত পরিমাণ সোডিয়াম বা চিনির উপস্থিতি থাকে। তাই ঘরেই বাচ্চা মুরগি ও মৌসুমি সবজির মিশেলে তৈরি করে নিতে হবে সাধারণ মুরগি ও সবজির স্যুপ। খুব পরিচিত এই খাবারটি একইসাথে পেট ভরা রাখবে, শরীরে পানির মাত্রা ঠিক রাখবে, পুষ্টি সরবরাহ করবে, স্যুপের উষ্ণতা ঠাণ্ডার সমস্যা কমাতে কাজ করবে। বিশেষত ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় শরীর তুলনামূলক দুর্বল হয়ে পড়ে। যা স্যুপ পানে অনেকটাই কেটে যাবে।
ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, ঘন ঘন হাঁচি-কাশি হওয়া, গলা ব্যথাভাবের মাঝে ঘুমানো কষ্টকর হয়ে ওঠে। বিশেষত যাদের ঠাণ্ডার সমস্যা থেকে মাথাব্যথা দেখা দেয় তাদের জন্য কষ্টটা বেড়ে যায় আরও বেশ অনেকটা। এ সময়ে দুইটি বালিশের উপর আধা শোয়া হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলে উপকার পাওয়া যাবে এবং নিঃশ্বাস সহজে নেওয়া যাবে। আরামদায়কভাবে বিছানায় শোয়ার পর অন্তত পক্ষে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। ঘুমের মাধ্যমে শরীর তার প্রয়োজনীয় বিশ্রাম পাবে এবং এতে করে নিজ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবে।
নিউ ইয়র্কের ‘নিউ ইয়র্ক কালিনারি মেডিসিন’ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং নেফ্রোলজি ও হাইপারটেনশন বিভাগের ফিজিশিয়ান ডারা হুয়াং জানান, ঠাণ্ডার সমস্যা কমাতে বিশ্রামের মতোই চমৎকার উপকারী আরেকটি উপায় হলো উপকারী চা পান। বেশ কিছু চা ঠাণ্ডার সমস্যা কমানোর পাশপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। এমন একটি উপকারী চা হলো আদা-হলুদে তৈরি হারবাল চা। আদার প্রদাহবিরোধী উপাদান এবং হলুদে থাকা কারকিউমেন এ সময়ে খুব ভালো কাজ করে। চায়ে মিষ্টতা আনতে ব্যবহার করা যেতে পারে মধু, যা আরেকটি উপকারী প্রাকৃতিক উপাদান।
আরও পড়ুন: