স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে মেঘনাপাড়ের বাসিন্দারা

, জাতীয়

হাসান মাহমুদ শাকিল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর | 2023-08-23 10:08:23

সারা বছরই কম বেশি লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন লেগে থাকে। তবে বর্ষাতে এর তীব্রতা বেড়ে যায়। আর যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মেঘনা হয়ে উঠে রাক্ষসের মতো। সামনে যা পায় মেঘনা সব গিলে খায়। শুকনো মৌসুমে অল্প ভাঙলেও বর্ষা এলেই বেশি আতঙ্কে থাকে উপকূলের মানুষ। পরিবেশের জন্য উপকারী ঋতু হলেও, উপকূলীয় মানুষগুলোর কাছে বর্ষা মানেই ভয়।

লক্ষ্মীপুরে প্রায় ৩ যুগ ধরে মেঘনার ভাঙনে হাজার হাজার পরিবার গৃহহারা হয়েছে। প্রতিনিয়তই মেঘনার ভাঙনে সর্বহারা হয়ে পড়ছে কেউ না কেউ। তাদের কান্না মেঘনার পানির সঙ্গে মিশে যায়। এজন্য তাদের কান্না কারো চোখে পড়ে না। ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোতে এখন আর কেউ স্বপ্ন দেখে না। কারণ স্বপ্ন দেখার আগেই তা মেঘনা গিলে খায়। তাই স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে মেঘনাপাড়ের বাসিন্দারা।

জেলার কমলনগর, রামগতি, সদর, রায়পুরে মেঘনা উপকূলীয় মানুষগুলো যুগ যুগ ধরে কত কি হারিয়েছে তার হিসাব কোথাও লেখা নেই। তাদের দুঃখের ভাগ কেউই নিতে রাজি নয়।

নদীর পাড়ের এক সময়কার বাসিন্দারা ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কের পাশে ঠাঁই নিয়েছে। আবার অনেকেই আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি কিংবা অন্যের জমিতে থাকছেন। নদীর পাড়ের ধনী বা মধ্যবিত্তদের অনেকেই আজ নিঃস্ব। গরিবরা তো সব হারিয়ে দিশেহারা।

আজও মেঘনার পাড়ে জেগে উঠা বেলাভূমিতে বিচরণ করতে গেলে চোখে পড়ে বিভিন্ন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। দেখা মেলে নারিকেল, সুপারিসহ বিভিন্ন গাছের গুঁড়ি। হাঁটতে গেলে পায়ে বিঁধে যায় বিলীন হয়ে যাওয়া স্থাপনার ইটের খোয়া কিংবা পাথরের টুকরো।

নদীর তীব্র স্রোতে গাছের গোড়ার মাটি সরে যাচ্ছে।

এদিকে গত ৫ আগস্ট অস্বাভাবিক জোয়ারে মেঘনার ৬০ কিলোমিটার এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদীর তীর থেকে ৪ কিলোমিটার লোকালয়ের ভেতরে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। এতে নদী ভাঙনের শঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীর তীর রক্ষা বাঁধ না থাকায় লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে কমলনগরে এক মুরগি খামারির প্রায় ৩০ লাখ টাকা, সদর ও রায়পুর উপজেলার বেশ কয়েকটি ঘেরের মাছ ভেসে গিয়ে অন্তত ১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সেদিনের জোয়ারে সদরের চররমনী ইউনিয়নের নদীর তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে নদী এলাকার জনজীবন।

অন্যদিকে মেঘনা নদীর কমলনগর উপজেলার নাছিরগঞ্জ বাজার এলাকায় ভাঙন রোধে জঙ্গলাবাঁধ নির্মাণ করেছে স্থানীয়রা। কিন্তু নদীর তীব্র ঢেউয়ের আঘাতে বিধ্বস্ত সেই জঙ্গলাবাঁধটি। এখন নড়বড়ে অবস্থা। একই উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

কমলনগরের বাত্তিরখাল এলাকার জেলে আমির হোসেন জানান, তার ঘরের ভিটে পর্যন্ত নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। জঙ্গলাবাঁধের কারণে এখনো কিছু অংশ ভাঙন থেকে বাকি আছে। তবে যেকোনো সময় বাকিটা বিলীন হয়ে যাবে।

কমলনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক রাকিব হোসেন সোহেল জানান, মেঘনা উপকূলীয় এলাকায় এখন আর পাকা স্থাপনা নির্মাণ করতে দেখা যায় না। নদীর তীর রক্ষা বাঁধ না থাকায় উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ ঝুঁকিতে রয়েছে। এজন্য সাধ্য থাকলেও কেউ সাহস করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছেন না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর