রাজধানী ঢাকাকে নিয়ে যে সকল সেবা সংস্থা বা সরকারি দফতর কাজ করে তাদের কঠোর হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেছেন, ঢাকাকে নিয়ে ছেলে খেলা করতে দেওয়া হবে না। আমি মেয়র যতদিন আছি, আমার ১ নং ওয়ার্ড থেকে ৭৫ নং ওয়ার্ড পুরোটা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের। পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে আমরা কাজ করব। এখানে অন্য যে সকল সংস্থাই হোক বা কর্তৃপক্ষই আমাদের অনুমোদন বিহীন ও সমন্বয় ছাড়া কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না। মেয়র হিসেবে ঢাকাবাসীর দায়িত্ব আমি নিয়েছি, সেটা পূর্ণ করব।
বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আধুনিক ও জনকল্যাণমূলক মহানগরী বিনির্মাণে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন সংক্রান্ত সভায় মেয়র একথা বলেন। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
মেয়র শেখ তাপস বলেন, আমাদের ঢাকা অবহেলিত। অনেকাংশে যদি ঢাকাকে নারী হিসেবে চিহ্নিত করি বা চিন্তা করি তাহলে নির্যাতিত হয়েছে। আমরা ঢাকাকে উন্নত হিসেবে গড়তে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারে অর্জনের সাথে তাল মিলিয়ে ঢাকাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি? পারছি না। আমরা ব্যর্থ হয়েছি।
তিনি বলেন, পরিকল্পনা, মহাপরিকল্পনা অনেক হয়েছে। তাহলে আমরা কেন এখনো সমস্যায় জর্জরিত? বাস্তবায়ন কে করবে? কে অভিভাবকত্ব নেবে? কে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবে? সেই জায়গাই তো সুনির্দিষ্ট নেই। আমি যখন সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে মেয়র নির্বাচন করি স্থানীয় সরকার সিটি করোপরেশন আইন ২০০৯ পড়েছি, সেখানে দেখলাম সবই আছে। তাহলে সমস্যা কোথায়? প্রয়োগ নেই, বাস্তবায়ন নেই।
যানজট নিরসনে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয় কিভাবে স্ট্যাটিজিক অথরিটি করে? সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয় একটি কর্তৃপক্ষকে বাস্তবায়নে বাধ্য করতে পারবে? সম্ভ্যব? সম্ভব না। কাজেই যদি সমন্বয়ের আওতায় আনতে না পারি তাহলে যে তিমিরে আছি, সেই তিমিরেই আমাদের থাকতে হবে।
তিনি বলেন, কোনো সংস্থা, কর্তৃপক্ষ বা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমাদের বিষোদগার নেই। কিন্তু স্থানীয় সরকার আইনে এবং তফসিলে আমাকে যে এলাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ১ নং ওয়ার্ড থেকে ৭৫ নং ওয়ার্ড আমি যতদিন মেয়র আছি আমি মনে করি পুরোটা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের। আমরা পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করব। এখানে অন্য যে সকল সংস্থা হোক, যে সকল কর্তৃপক্ষ হোক, যত মন্ত্রণালয়, যত উচ্চতর কমিটি হোক না কেন আমাদের অনুমোদন বিহীন বা আমাদের সমন্বয় ছাড়া কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না। হ্যাঁ যদি ঢাকাবাসী বলে যে আমি অন্যায় করেছি, ভুল করেছি, যদি বড় আকারে ভুল হয় আমি শুধরে নিবো। কিন্তু এই যে কাটাকাটি ছেড়াছিড়ি, ঢাকাকে নিয়ে খেলা, তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন, তাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন বিশ্ব ব্যাংকের প্রজেক্ট দেখানো এডিপি দেখানো ওটা আমার প্রয়োজন নেই। আমি জানি আমার ঢাকাবাসীর জন্য কি প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার ওপর আস্থা রেখেছেন, ঢাকাবাসী আমার ওপর আস্থা রেখেছেন সুতরাং আগামী ৫ বছর আমি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাব।
মেয়র বলেন, আমাদের অনুমোদন ছাড়া ঢাকা শহরে কেউ কিছু করতে পারবে না। সেটা সরকারি সংস্থা হোক, বেসরকারি সংস্থা হোক। ঢাকা সিটি করোপরেশনের অনুমোদন নিতে হবে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় প্রত্যেকটা বিষয় আসতে হবে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস, একটি জায়গায় আসতে হবে। সেটা হচ্ছে সিটি করপোরেশন। এই জায়গায় না আসতে পারলে সমস্যার সামাধন হবে না।
তিনি আরও বলেন, জনঘনত্ব মাথায় নিয়ে শুধু ঢাকাকে নিয়ে পরিকল্পনা না করে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে। ঢাকার আশপাশের শহরগুলোকে পর্যাপ্ত নগরায়ন করতে হবে। তাহলে ঢাকার ওপর চাপ কমে যাবে। যারা ঢাকায় আসবে কাজ করে চলে যাবে। সেখানে সুন্দর আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকা হলো রাজধানী। ঢাকাকে স্লাম বানাবেন না। ঢাকাকে ক্যাপিটাল বানান। সেটার চিন্তা করতে হবে। ক্যাপিটালের সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করব। কিন্তু থাকার জন্য ঢাকা কেন্দ্রিক চিন্তাটা পরিহার করতে হবে। নিম্ন শ্রেণির থাকার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করতে হবে।
সকল সেবা সংস্থাকে ১ অক্টোবরের মধ্যে তাদের নিজস্ব পরিকল্পা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনাদের যে পরিকল্পনা আছে আমাদের ১ অক্টোবরের মধ্যে দেবেন। আপনাদের প্লান দিলে আমরা সমন্বয় করব। কেননা ঢাকাকে নিয়ে আমাদের যে পরিকল্পনা সেই পরিকল্পনার সাথে যেন সাংঘর্ষিক না হয়। অবশ্যই আপনারা আপনাদের প্রকল্প বাস্তায়ন করবেন, কিন্তু এক জায়গায় তিনবার কাটতে পারবেন না। এক জায়গায় একবারই কাটতে পারবেন। ১ অক্টোবরের পর নতুন কোনো প্রকল্প নিতে পারবেন না। ১ অক্টোবরের পর নতুন কোন প্রকল্প বাস্তবাযন করতে দেব না। সেটা বিশ্ব ব্যাংক হোক, এডিপি হোক, জিওবি হোক, যে কোনো ফান্ড হোক, ফান্ডের অযুহাত দেখাবেন না।