অব্যাহতি দেওয়া কলেজে অধ্যক্ষকে ফেরাতে বিএনপি নেতাদের চেষ্টা, থানায় মামলা
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ প্রীতির অভিযোগ উঠেছিল রাজশাহীর শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে। কলেজের বেশিরভাগ শিক্ষক এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে অধ্যক্ষ পদ থেকে অব্যাহতি দেয় কর্তৃপক্ষ। গত সোমবার বিএনপির কিছু নেতা আবারো তাকে অধ্যক্ষ পদে বসানোর চেষ্টা করেন। এসময় তারা কক্ষের তালা ভেঙ্গে অধ্যক্ষকে ভেতরে প্রবেশ করান। এসময় অধ্যক্ষের সাথে আসা বহিরাগতদের সাথে পুলিশের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম এবং পুলিশের পক্ষ থেকে রাজপাড়া থানায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছেন, সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ১১টার দিকে ড. মো. গোলাম মাওলা (৫৮) (অব্যাহতি প্রাপ্ত অধ্যক্ষ, শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ), ঐহিক (২৬), জি.এম মাহবুব চৌধুরী (৬৫), মামুনুর রহমান (৪৫), মো. মকবুল হোসেন (৪৫), মোসা. আজিজুন নেসা (৫৮), মল্লিকা সমাদ্দার (৫৫), রাজু (২৬), সাগর (২৬) সহ অজ্ঞাতনামা ৪০/৫০ জন বহিরাগত ব্যক্তি পূর্বপরিকল্পিতভাবে বেআইনিভাবে কলেজে প্রবেশ করে জোরপূর্বক অধ্যক্ষের অফিস কক্ষ খুলে দিতে বলে। তাদের নিষেধ করলে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শন করে। হুমকি প্রদর্শনের একপর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চাবি দিতে অস্বীকার করলে তারা অফিস কক্ষের তালা ভেঙ্গে জোরপূর্বক ভিতরে প্রবেশ করে চেয়ার, টেবিল ও অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এতে কলেজের প্রায় ৩০ হাজার টাকার ক্ষতিসাধন হয়।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের ডোনেশান বাবদ অধ্যক্ষের কক্ষে রক্ষিত নগদ ৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা তারা চুরি করে এবং অফিসের কাগজপত্র নষ্ট করে। এমতাবস্থায় রাজপাড়া থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে ড. মো. গোলাম মাওলার নেতৃত্বে উল্লিখিত আসামিরা পুলিশের সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান করে এবং পুলিশ সদস্যদের ওপর চড়াও হয়। তারা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ঠেলা ধাক্কা ধস্তাধস্তি ও কিলঘুষি মারে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড. গোলাম মাওলা অধ্যক্ষ থাকাকালে আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে কাজ করতেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে তাঁর বিভিন্ন ছবি পাওয়া গেছে। এসব ছবিতে তাকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্পে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতার সাথে নৌকা প্রতীকে তাকে ভোট চাইতেও দেখা গেছে। এমনকি আওয়ামী লীগের আমলে তাকে বিভিন্ন সুবিধা নিতে এবং ক্ষমতার অপব্যবহারও করতে দেখা গেছে।
জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পর তিনি বিএনপি নেতাদের সাথে নিয়ে গত সোমবার অধ্যক্ষের অফিস দখল করেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, অধ্যক্ষের অফিস দখলের সময় গোলাম মাওলার সাথে আসা কিছু বিএনপি নেতাকে গোলাম মাওলাকে ফুলের মালা ও মিষ্টিমুখও করাতে দেখা গেছে। এসময় থানা ছাত্রদলের নেতাদেরও গোলাম মাওলার সাথে দেখা গেছে।
এবিষয়ে জানতে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা বলেন, আমি বিষয়টি জানি না। তাই এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবো না।
রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল আলম বলেন, শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অভিযোগ দিয়েছেন। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের কাজে বাধা প্রদানের ঘটনায় আরো একটি মামলা হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে ড. মো. গোলাম মাওলাকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।