পাসপোর্ট ছাড়াই স্মার্টকার্ড দিয়ে সাত দেশ ঘুরতে পারবেন নাগরিকরা

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 23:02:13

পাসপোর্ট ছাড়া স্মার্টকার্ড দিয়ে ফোরাম অব দি ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিজ অব সাউথ এশিয়ার (ফেমবোসা) সাত দেশ ঘুরতে পারবেন বাংলাদেশের নাগরিকরা। শীঘ্রই এ প্রক্রিয়া শুরু হবে। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি উইং) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

আটটি দেশ নিয়ে গঠিত ফেমবোসার সদস্য দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপ।

পাসপোর্ট ছাড়া স্মার্টকার্ড দিয়েই সব কাজ করা যাবে উল্লেখ করে এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক বলেন, এই কার্ডগুলো দিয়ে পাসপোর্টের কাজও করা যাবে। আমরা ফেমবোসার দেশগুলোতে পাসপোর্টের বদলে স্মার্টকার্ড ব্যবহার করতে পারব। এতে করে আমাদের পাসপোর্টের ঝামেলা কমে যাবে। শুরুতেই আমরা ফেমবোসার অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো দিয়েই এই প্রক্রিয়া শুরু করতে চাই। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে সবদেশে এটি চালু করা হবে। শীঘ্রই আমরা এই প্রক্রিয়া শুরু করব।

তিনি বলেন, ‘স্মার্টকার্ডের মধ্য পাঁচটি স্তরে ২৫টি সিকিউরিটি ফিচার আছে। কার্ডে পাঁচটি লেয়ারে সিকিউরিটি ফিচার দেওয়া আছে। এছাড়াও নাগরিকের সম্পূর্ণ বায়োডাটা এর মধ্যে সংরক্ষিত আছে। কার্ডের ভেতরে একটি পাতা আছে, যেখানে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ, জাতীয় সংগীত, বাংলাদেশের মানচিত্র, শাপলা ফুল, আলট্রাভায়োলেট রে, চোখের আইরিশ, বায়োমেট্রিক, ফিঙ্গার প্রিন্টসহ আরও কয়েকটি ফিচার আছে। এ ছাড়া একজন মানুষের ৩১টি ডাটা আছে। এই ডাটাগুলো তার কি না আইডি পাঞ্চ করলেই সব দেখা যাবে।’

জানুয়ারি থেকে স্মার্টকার্ডের ব্যহার শুরুর পরিকল্পনা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্মার্টকার্ডে একজন নাগরিককে চেনার জন্য যা দরকার তা সবই আছে। এখনও এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হয়নি। জানুয়ারি থেকে স্মার্টকার্ডের ব্যবহার শুরু করার পরিকল্পনা আছে। তখন মেশিনে কার্ডটি দিলে ব্যক্তির সব তথ্য চলে আসবে। ফিঙ্গার প্রিন্ট দিলেই সনাক্ত করা যাবে কার্ডের ব্যক্তির পরিচয়।

ফেমবোসার সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে বাণিজ্যিকভাবে স্মার্ট পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) কিনতে আগ্রহী জানিয়ে তিনি বলেন, আফগানিস্তান, মিয়ানমার, নেপালসহ আরো দু’একটা দেশ বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র কিনতে প্রকাশ করেছে। তাদের টিম আগামীতে বাংলাদেশে আসবে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত দেখতে বা কথা বলতে। ফেমবোসার আটটি দেশ বাংলাদেশে এসে আমাদের স্মার্টকার্ড দেখেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনেছে। স্মার্টকার্ডের ফিচার দেখে তাদের খুব পছন্দ হয়েছে। আমরা সমগ্র ফিচার ভিডিও ও অডিওর মাধ্যমে তুলে ধরেছি তাদের কাছে। তারা আরো দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে তারা পরে আর দেখতে পারেনি। তারা বলে গেছে, আবার আসবে এবং কিনবে।

সাইদুল ইসলাম আরো বলেন, ‘স্মার্টকার্ড তৈরি করতে আমাদের খরচ হবে ১ দশমিক ৬ ডলারের মতো। খুব ভালো মানের হলে সর্বোচ্চ খরচ ২ দশমিক ২ ডলার। এখন আমরা এই কার্ড তাদের কাছে বিক্রি করতে পারব আড়াই ডলারে। তারা নিতেও চেয়েছে। এখানেও আমাদের লাভ হচ্ছে। দেশের টাকা আয় হবে। এর পরে জনপ্রিয়তা পেলে আমরা আরো বেশি বেশি দামে বিক্রি করতে পারব। আমাদের জনবল খরচ কম, তাই খরচও কম পড়বে। কিন্তু অন্য দেশে এই একই কার্ড কিনতে চার ডলারের মতো খরচ হবে তাদের। সেটা তাদের জন্য লোকসান হবে। তাহলে তারা সেখান থেকে কেন নেবে? আর আমাদের মতো এত আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কার্ড খুব কম দেশেই আছে।’

ইসি সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘমেয়াদি টেকসই কার্যক্রম এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সম্মান বিবেচনায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন গত বছরের ২৭ আগস্টে দেশিয় প্রযুক্তি, নিজস্ব জনবলের মাধ্যমে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র উৎপাদন করছে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনা ও জনবল ব্যবহারের কারণে প্রায় ১৩৭ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে ইসির। এতে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি টেকসই সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট এবং নিজস্ব সক্ষমতাও অর্জিত হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর