টানা অভিযানেও চলছে মাদক ব্যবসা, যুক্ত হচ্ছে নতুন মাদক

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 14:44:20

টানা চার মাস ধরে চলছে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান। ইতোমধ্যে র‍্যাব-পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ২৩২ জন মাদক ব্যবসায়ী। গ্রেফতার করা হয়েছে ৬১ হাজার জনকে। যাদের মধ্যে মাদকসেবী, ব্যবসায়ী ও গডফাদার আছে। তারপরও বন্ধ হচ্ছে না মাদক ব্যবসা। বিদেশ থেকে আসছে নতুন নতুন মাদক। যার মধ্যে 'খাত বা খাট' অন্যতম।

জানা যায়, বিভিন্ন ধারণের মাদকের মধ্যে ইয়াবার দাম স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। এক পিস ইয়াবার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকায়, যার স্বাভাবিক দাম ১৫০ টাকা। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে সরাসরি মাদক বিক্রি কমলেও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেদারছে চলছে মাদকের বিকিকিনি। বিশেষ করে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে মাদক বিক্রি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়া ‘পিলস ফর সেল অনলাইন’ নামের একটি ওয়েবসাইটে ইয়াবা বিক্রির বিজ্ঞাপন নজর কাড়ার মতো।

একাধিক গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, অভিযানের এ পর্যায়ে অনলাইনের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের একাধিক টিম এটা নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে মাদক বিক্রির অভিযোগে বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজও শনাক্ত করা হয়েছে। এদিকে র‍্যাব সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সার্ভিসেও মাদক বহন করা হচ্ছে। গত ২৪ জুন ইয়াবা বহনকালে র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় পাঠাও চালকসহ চারজন।

অন্যদিকে, দেশব্যাপী অভিযান চললেও বিদেশ থেকে আসছে নতুন নতুন মাদক। যার মধ্যে নিউ সাইকোট্রফিক সাবসটেনসেস (এনপিএস) বা ‘খাট’ অন্যতম। গ্রিনটি’র আড়ালে দেশে ঢুকছে এ ভয়াবহ মাদক। সর্বশেষ গত ৯ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দরের কার্গো ইউনিটের ভেতর ‘ফরেন পোস্ট অফিসের’ মাধ্যমে আসে এক হাজার ৬০০ কেজি এনপিএস।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) নজরুল ইসলাম সিকদার বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘এনপিএস বা খাট আমাদের দেশে নতুন। গত এক মাসের মধ্যে মোট তিনটি চালান জব্দ করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এই মাদকের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। তা না হলে একদিন এটা ইয়াবার মতো ভয়াবহ হয়ে উঠবে।’

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ৪ মে থেকে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ৬১ হাজার ৬৫০ মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। শুধু র‍্যাবই জব্দ করেছে ২২৮ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য।

মাদকবিরোধী অভিযানের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক শাহরিয়ার আফরিন বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘অভিযান চালিয়ে কখনো মাদক নির্মূল করা সম্ভব না। এর জন্য দরকার সামাজিক সচেতনতা। তবে অভিযানে সাময়িকভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণ ও মাদক ব্যবসায়ী বা মাদকসেবীদের কোণঠাসা করে রাখা যাবে। মাদক নির্মূল করতে চাইলে, পরিবার থেকে সচেতনতা শুরু করতে হবে। পরে তা সমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে। একমাত্র সামাজিকভাবেই এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।’

সার্বিক বিষয়ে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘মাদক সমস্যা কখনও রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব না। টানা অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীরা কোণঠাসা হয়ে পরেছে। র‍্যাব ইতোমধ্যে অনেক গডফাদারকে আইনের আওতায় এনেছে। তবে দেশ থেকে মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর