কিছু রোহিঙ্গা ভাসানচরে যেতে আগ্রহী, তবে চূড়ান্ত হয়নি দিনক্ষণ

, জাতীয়

ইমাম খাইর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার | 2023-08-26 13:18:54

কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা ভাসানচরে যেতে আগ্রহী। তবে কখন যাবে, কতজন যাচ্ছে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ লক্ষ্যে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, প্রথম দফায় এক হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবির থেকে এক লাখ রোহিঙ্গা ভাসানচরে পাঠানোর উদ্যোগ বাস্তবায়নের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন স্থানীয়রা।

মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) সকালে এ বিষয়ে কথা হয় অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজার সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা মতো আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কত সংখ্যক রোহিঙ্গা ভাসানচরে যাচ্ছে তা নিশ্চিত হতে পরিনি। কোন ক্যাম্প থেকে কারা যাচ্ছে তাও বলা যাচ্ছে ন।

এটা ঠিক, এই মাসের প্রথম ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে একটি দল ভাসানচরে যাবে। সেই টার্গেটে আমরা কাজ করছি। তবে জোর করে কোনো রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠানো হবে না। যারা স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহী তাদের পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আবাসন দিতে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত নোয়াখালীর ভাসানচর। কক্সবাজারের শিবিরগুলো থেকে স্বেচ্ছায় যেতে ইচ্ছুক এমন রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের কাজ শিগগির শুরু হতে পারে।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়, এপিবিএন-এর আইজিপি, নোয়াখালী জেলা প্রশাসকসহ সরকারি একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

করোনা মহামারির শুরুর দিকে সাগর থেকে উদ্ধার করা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে পাঠানো হয়। তারা এখনো পর্যন্ত সেখানেই আছেন। তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা ছিল সরকারের। এ বিষয়ে গত সেপ্টেম্বরে সরকার ‘গো অ্যান্ড সি’ প্রকল্পের অধীনে ৪০ জন রোহিঙ্গা নেতাকে চার দিনের সফরে ভাসানচর দেখাতে নিয়ে যায়।

ভাসানচরে পরিদর্শন শেষে তারা জানিয়েছিলেন, ভাসানচরের সুবিধাদি দেখে ভালো লেগেছে। কিন্তু ফিরে এসে নানা মহল থেকে হুমকি পাওয়াসহ বিভিন্ন এনজিও তাদের নিরুৎসাহিত করছে বলে এ নিয়ে উভয় সংকট দেখছেন রোহিঙ্গা নেতারা।

জানা গেছে, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের জন্য সেখানে নতুন করে কর্মকর্তাসহ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর আরো ২২২ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এরইমধ্যে ২২টি এনজিও সংস্থার থেকে দেওয়া পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ভাসানচরে পৌঁছেছে।

অন্যদিকে, ভাসানচরের আবাসন প্রকল্প দেখে মুগ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় যেতে ইচ্ছুক সাড়ে ৩শ পরিবারের আড়াই হাজার রোহিঙ্গাকে ডিসেম্বরের প্রথম দিকেই ভাসানচরে হস্তান্তর শুরু করতে সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে সরকার।

বার্তা সংস্থা ইউএনবি স্পষ্ট জানিয়েছে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। এর আগে, উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্প থেকে ইতিমধ্যে ৪ হাজার রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে রাজি বলে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়কে অবহিত করেছিল।

গত ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর দুই দিনের সফরে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। সেই প্রতিনিধি দলে থাকা ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনজে তিরিঙ্ক ভাসানচরে সরকারের ‘গো অ্যান্ড সি’ প্রকল্পের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া একটি ভালো উদ্যোগ ছিল।।

রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আশ্রয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ এবং এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছ গ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের এক সভায় ভাসানচরের জন্য নেওয়া প্রকল্পের খরচ ৭৮৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা করা হয়। বাড়তি টাকায় বাঁধের উচ্চতা ১০ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৯ ফুট করা, আনুষঙ্গিক সুবিধা বৃদ্ধিসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য ভবন ও জেটি নির্মাণে খরচ হবে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। আগের ৪ লাখসহ বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার চুক্তি করলেও মিয়ানমারের অনাগ্রহের কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। পরপর দুবার প্রত্যাবাসনের খুব কাছাকাছি গিয়েও একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে পাঠানো যায়নি।

এদিকে, নতুন রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে ভাসানচরে পাঠাতে গত মঙ্গলবার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের সরকারি ওয়েবসাইটে ভাসানচরের জন্য ফুড ও নন ফুড আইটেম চাহিদা পত্রের নমুনা সংযোজিত হয়েছে। এরইমধ্যে বিভিন্ন এনজিও ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের পর সম্ভাব্য সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রকল্প (ফুড ও নন ফুড) জমা দেওয়ার কথা সরকারকে জানিয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর