চট্টগ্রাম ওয়াসা: প্রতিষ্ঠার ৬৫ বছর পর বাস্তবায়ন হচ্ছে সুয়ারেজ প্রকল্প

চট্টগ্রাম, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 12:20:44

আগামী একনেক সভায় অনুমোদন পেতে পারে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি

প্রতিষ্ঠার ৬৫ বছর পর সুয়ারেজ লাইন বসাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। ‘ওয়াটার সাপ্লাই এন্ড সুয়ারেজ অথরিটি’ নামে ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হলেও এতোদিন শুধু নগরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহ করে আসছিল সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি। সুয়ারেজ নিয়ে তাদের কোনো চিন্তাই ছিল না। অবশেষে প্রায় চার হাজার কোটি টাকায় সুয়ারেজ বাস্তবায়নের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রি-একনেক অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটি আগামী মাসে সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটিতে (একনেক) তা অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা এতোদিন পানি দিতেই হিমশিম খেতে হতো সুয়ারেজ নিয়ে পরিকল্পনাও ছিল না জানিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, আগে সুয়ারেজ নিয়ে কেউ চিন্তা করেনি। আমি সুয়ারেজ মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছি। সেই প্ল্যান ব্যবহার করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প নিয়েছে। এখন এই প্ল্যানের আলোকে সুয়ারেজ চালুর প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর প্রি-একনেকও অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটি পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদনের কথা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় সুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং প্রকল্প নিতে বলেছিলেন। এরই আলোকে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।

এদিকে প্রকল্পে কি কি রয়েছে জানতে চাইলে ওয়াসার তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, পুরো নগরীকে ছয়টি জোনে ভাগ করে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। এই ছয়টি জোনের প্রতিটির জন্য পৃথক পৃথক সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থাকবে। আবার এই ছয়টি জোনের সেফটিক ট্যাংকের শক্ত বর্জ্য পরিশোধনের জন্য নগরীতে দু’টি ফিকেল স্লাজ শোধনাগার থাকবে।

সুয়ারেজ প্রকল্পের আওতায় কি কি হবে জানতে চাইলে ওয়াসার এই প্রকৌশলী বলেন, গৃহস্থালি থেকে তিনটি উৎস থেকে পানি আসে। একটি হলো বৃষ্টির পানি, অপরটি হলো গৃহস্থালি ও রান্নাঘরের ব্যবহার্য পানি এবং অপরটি হলো টয়লেটের পানি। সুয়্যারেজ প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু বৃষ্টির পানি ছাড়া বাকি সব পানি আমরা পাইপের মাধ্যমে প্রতি ঘর থেকে সংগ্রহ করবো।

এই বর্জ্য কোথায় যাবে জানতে চাইলে প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, এই বর্জ্য পাইপের মাধ্যমে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে চলে যাবে। সেখানে পরিশোধন হয়ে কম্পোষ্ট তৈরি হবে।

তাহলে নগরীতে নতুন করে পাইপ বসাতে হবে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, অবশ্যই বড় ব্যাসের পাইপ দিয়ে এসব বর্জ্য পরিশোধন করা হবে।

তবে অপর এক সূত্রে জানা যায়, যেসব এলাকায় পাইপ বসানো যাবে না সেসব এলাকার খালের মধ্য দিয়ে এসব বর্জ্য পরিবাহিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তবে গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সম্প্রতি সিডিএ’র এক সভায় সুয়্যারেজ প্রকল্প নিয়ে বলেছেন, খালের মধ্য দিয়ে কোনো বর্জ্য পরিবাহিত করা যাবে না। এতে আশপাশের এলাকার পরিবেশ আরো দূষিত হবে।

তিনি বলেন, সব বর্জ্য পাইপের মাধ্যমে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে নিয়ে যেতে হবে। নালা ও খালের মাধ্যমে তা গিয়ে কর্ণফুলীতে পড়ছে বলেই দূষিত হচ্ছে কর্ণফুলী। শুধুমাত্র জোয়ার-ভাটা থাকায় কর্ণফুলী এখনো মারা যাচ্ছে না।

এই কর্ণফুলী নদীকে বাঁচানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াসার নগরীতে সুয়ারেজ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছিলেন। নগরীর বোট ক্লাব প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, নগরীতে একটি কেন্দ্রীয় সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রয়োজন। আপনারা (ওয়াসা) প্রকল্প নিয়ে আসেন আমি অনুমোদন দেব। তারপরও কর্ণফুলীকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।

জানা যায়, চট্টগ্রামে শুরু হতে যাওয়া এই প্রকল্পটি ২০২৩ সালে গিয়ে শেষ হবে। আর তা বাস্তবায়ন হলে নগরীর একাংশে (পাহাড়তলী, হালিশহর, ডবলমুরিং, আগ্রাবাদ, কোতোয়ালী প্রভৃতি এলাকায়) সুয়ারেজ লাইন চালু হবে।

উল্লেখ্য, সব দেশেই সুয়ারেজ লাইন রয়েছে। শুধুমাত্র আমরা আমাদের পয়ো:বর্জ্য নালা ও খালের মাধ্যমে অপসারণ করছি। ইতিমধ্যে ঢাকায় সুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর