রাজধানীর গুলশানে ভারতের মাফিয়া ডন খ্যাত দাউদ ইব্রাহীমের সহযোগী পরিচয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে এক কিশোরকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা পুলিশ গুলশান বিভাগ। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় ওই তরুণের নাম ও ছবি প্রকাশ করেনি ডিবি পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতার কিশোর ভারতীয় সিনেমা সিরিয়াল ও বিশেষ করে ক্রাইম পেট্রোলের মতো হিন্দি সিরিয়াল দেখে ভারতীয় শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোটা শাকিলের পরিচয়ে ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি করে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে। গ্রেফতার কিশোর এই ব্যবসায়ীর গ্রামের বাড়ির কেয়ারটেকারের ছেলে।
হাফিজ আক্তার বলেন, গুলশান গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম বিশেষ অভিযান চালিয়ে ভারতীয় সন্ত্রাসী পরিচয়ে গাড়িতে নকল বোমা রেখে চাঁদা দাবির অভিযাগে গতকাল বুধবার ২৭ জানুয়ারি ওই কিশোরকে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে চাঁদা দাবির ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি ভোর ৪টায় ভারতীয় কুখ্যাত সন্ত্রাসীর পরিচয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঢাকার গুলশানের ঢালী সুপার স্টোরের মালিক ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিনের কাছে পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দিলে বোমা মেরে তার পরিবারের সদস্যদের উড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।
পর দিন ১২ জানুয়ারি বিকেলে ওই ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর প্রাইভেটকারটি পার্কিং করা অবস্থায় গাড়ির ড্রাইভার গাড়ির নিচে বোমা সাদৃশ বস্তুর উপস্থিতি দেখতে পায়। বিষয়টি বাড্ডা থানা পুলিশ সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল টিমকে অবহিত করে। পরবর্তীতে ডিএমপির সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে বোমাসদৃশ বন্তুটি অপসারণ এবং ধ্বংস করে।
বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বোমা সদৃশ বস্তুটি একটি অকার্যকর বোমা ছিল। ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে বাড্ডা থানায় একটি মামলা হয়। ওই ঘটনাটির তদন্ত ও রহস্য উদঘাটনে তৎপর হয় ডিবি টিম। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ শেষে ঘটনার মূলহোতাকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার তরুণ ডিবিকে পুলিশকে জানিয়েছে, সে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর গ্রামের বাড়ির কেয়ারটেকারের ছেলে। সে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর একটি কাপড়ের দোকানে ৪ হাজার টাকা বেতনে সেলসম্যানের কাজ নেয়। কিন্তু বেতন অল্প হওয়ায় এবং দ্রুত ধনী হওয়ার আশায় সেখান থেকে পালিয়ে আসে।
তিনি আরো বলেন, ধনী হওয়ার জন্য ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিনের পরিবারকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায়ের পরিকল্পনা করে ২ মাস আগ থেকে। এজন্য সে হিন্দি সিনেমা, সিরিয়াল, ইউটিউব দেখে নকল বোমা বানানো এবং সন্ত্রাসী পরিচয় হুমকি ধামকি দেওয়ার কৌশল শিখে। হিন্দি সিনেমা দেখার কারনে সে হিন্দি ভাষায় কথা বলার দক্ষতা অর্জন করে। লাল স্কচটেপ, পাইপ, ইলেকট্রিক তার, পেন্সিল ব্যাটারি ও আনুসঙ্গিক উপকরণ দিয়ে বোমা সদৃশ বস্তুটি বানিয়ে রাখে। ব্যবসায়ী তার প্রাইভেটকার নিয়ে ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে তার এক আত্মীয়ের জানাজায় যোগদান করতে যায়। সেই সুযোগে গ্রেফতার ওই তরুণ প্রাইভেটকারের নিচে বোমা সদৃশ বস্তুটি টেপ মেরে আটকে দেয়।
সমাজের উচ্চ বিত্তবানদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয়ে বা কোনো চাঁদাবাজ যদি ফোন করে হুমকি দেয়, চাঁদা দাবি করে তাহলে নিকটস্থ থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশকে জানান, আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।