জনবল সংকট, নামে মাত্র সদর হাসপাতাল

খুলনা, জাতীয়

অনিক চক্রবর্ত্তী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-10 10:56:17

চুয়াডাঙ্গা: জেলার ১৩ লাখ মানুষের জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একমাত্র ভরসা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল। কিন্তু এ হাসপাতালে ডাক্তার ও বেড (শয্যা) সংকটের কারণে দিনের পর দিন চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

২০০৩ সালে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল। খাতা কলমে ১০০ শয্যায় রূপ নিলেও সেই ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে কোনো রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতালটি। এতে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে মারাত্মক হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তারা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও দেখা পাচ্ছে না চিকিৎসকের।

অন্যদিকে হাসপাতালটিতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় বাড়তি সুবিধা নিতে প্রাথমিক চিকিৎসা কাজে হাত লাগাচ্ছে অদক্ষ স্বেচ্ছাসেবকরা। যদিও বিষয়টি অবৈধ, তবুও নিরুপায় হয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসে এসব অদক্ষ স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে সাধারণ রোগীরা।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস বলছে, সদর হাসপাতালে ৪২টি পদের মধ্যে চিকিৎসকের স্থলে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১৭ জন। ২৫টি পদ শূন্য রয়েছে। গত সাত মাস ধরে হাসপাতালের বায়োকেমিস্ট্রি পরীক্ষা করার মেশিনটি নষ্ট হয়ে আছে। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন টেস্ট রোগীদের বাইরে থেকে করে আনতে হচ্ছে।

১৯৭০ সালে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট দিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। জনসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ২০০৩ সালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। শয্যা সংখ্যা নাম মাত্র বাড়লেও হাসপাতালটিতে ডাক্তার, নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। ডাক্তার সংকটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোগীদের বসে থাকতে হয় হাসপাতালের বাইরে। রোগীদের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রচেষ্টায় ২০১১ সালে প্রায় সাড়ে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০ শয্যার জন্য নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হয়। ২০১৬ সালে হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পাঁচ বছরে তা আলোর মুখ দেখেনি।

এদিকে জনবল সংকটের কারণে এতো রোগীর চাপ সামাল দিতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে ওয়ার্ড নার্সদের। প্রতিটি ওয়ার্ডে ১৫-২০টি শয্যা রয়েছে। তবে সেই তুলনায় প্রতিদিন একেকটি ওয়ার্ড থেকে শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। বেডসহ চিকিৎসক ও ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে রোগীদের। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাসপাতালের বারান্দায় অপেক্ষা করে চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া অসংখ্য রোগী হাসপাতালের বারান্দায় ভর্তি রয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিটি বিভাগেই জনবলের সংকট রয়েছে। এতো সব সমস্যার কারণেই ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।

জেলা সিভিল সার্জন কর্মকর্তা ডা. খায়রুল আলম জানান, জনবল সংকটের কারণে জরুরি বিভাগে স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগানো হচ্ছে। যদিও বিষয়টি ঠিক নয়, তবুও কোনো উপায় না পেয়ে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। খুব দ্রুত ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি চালু হলে রোগীদের দুর্ভোগ কমবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর