কালজয়ী চলচ্চিত্রকার ও শক্তিমান কথাসাহিত্যিক জহির রায়হানের ৮৭তম জন্মদিন আজ বৃহস্পতিবার। ১৯৩৫ সালের এই দিনে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার মজুপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
পারিবারিক নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। বড় ভাই সাহিত্যিক, সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সারকে স্বাধীনতার আগ মুহূর্তে আলবদর বাহিনী অপহরণ করে। নিখোঁজ ভাইকে খুঁজতে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হান মিরপুর এলাকায় যাওয়ার পর তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
জহির রায়হান ছিলেন সফল সাংবাদিক, লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম ১০ জনের যে দলটি ১৪৪ ধারা ভেঙেছিল, জহির রায়হান তাদেরই একজন। ১৯৬৯ সালের অভ্যুত্থানেও জড়িত ছিলেন।
বাংলাদেশে বহুল পঠিত উপন্যাসের নাম জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’। গ্রামীণ মানুষের জীবনের কথা উঠে এসেছে এই উপাখ্যানে। বইটি প্রকাশের এত বছর পরও পাঠকের কাছে একটুও আবেদন কমেনি বরং বেড়েছে।
তার ‘আরেক ফাল্গুন’ ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে লেখা এক অসাধারণ উপন্যাস। এ ছাড়াও, ভাষা আন্দোলন নিয়ে তিনি আরও একটি উপন্যাস লিখেছেন, বইটির নাম ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’। ‘বরফ গলা নদী’ তার আরেকটি অসাধারণ উপন্যাস। এ দেশের সাধারণ মানুষের জীবনের কথা উঠে এসেছে এ উপন্যাসে। আবার ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ উপন্যাসে জীবন ও ভালোবাসা মিশে আছে বিনিসুতোর মালার মতো।
সাহিত্য ও চলচ্চিত্র দুই দিকে সফল জহির রায়হান। আবার ছোটগল্পকার হিসেবেও সফল। তার লেখা ছোটগল্প ‘সময়ের প্রয়োজনে’ অনেক বছর আগে পাঠ্য হিসেবে ছিল। তার লেখা অন্য ছোটগল্পগুলোও পাঠকের মন ছুঁয়ে গেছে।
চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে ১৯৫৭ সালে উর্দু ভাষার 'জাগো হুয়া সাভেরা' ছবিতে সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি 'সঙ্গম' নির্মাণ করেন তিনি। ১৯৬৫ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি 'বাহানা'। ১৯৭১ সালে জহির রায়হান নির্মাণ করেন কালোত্তীর্ণ প্রামাণ্যচিত্র 'স্টপ জেনোসাইড'। ‘জীবন থেকে নেয়া’ জহির রায়হানের অমর এক সৃষ্টি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে সিনেমাটি। সিনেমাটি আজও দর্শকরা অধীর আগ্রহ নিয়ে দেখেন।
নায়ক রাজ রাজ্জাক অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘বেহুলা’র পরিচালকও জহির রায়হান। জহির রায়হানের হাত ধরেই নায়ক হিসেবে রাজ্জাকের আগমন এ দেশের সিনেমায়। নায়িকা ববিতাসহ অনেক শিল্পীর সিনেমায় অভিষেক ঘটে জহির রায়হানের হাত ধরে।
শিল্প-সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নিগার চলচ্চিত্র পুরস্কার, আদমজী সাহিত্য পুরস্কার এবং বাংলা একাডেমির মরণোত্তর সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।