এখন ভাদ্র মাস প্রকৃতিতে শরৎ ঋতুর আগমন ঘটেছে বেশ কয়েকদিন হলো। শরতকে ঋতুর রানী বললেও ভুল হবে না।এসময় নদী তীরবর্তী স্থানগুলো সাদা কাশ ফুলে ছেয়ে থাকে। আকাশে স্বচ্ছ নীল মেঘের উড়াউড়ি ও ঝিরঝিরি বতাসের ছোঁয়ায় শরীর ও মন জুড়িয়ে যায়।
তবে নিয়মিত বৃষ্টি হলেও ভাদ্রের ভ্যাপসা গরম কমছে না! অনেকেই বলছে ভাদ্রে বৃষ্টি হচ্ছে অথচ ভ্যাপসা গরম কমছে না কেনো?
আজ সকাল থেকেই উত্তরাঞ্চলের আকাশ রৌদ্র উজ্জ্বল। স্বচ্ছ নীল মেঘ আকাশে উড়ছে তার আপন গতিতে। রৌদ্র উজ্জ্বল আবহাও হলেও বাতাস থাকায় গরম অনুভূত হচ্ছে তুলনামূলক কম। এমন নৈসর্গিক প্রকৃতি এখন সচারাচর দেখা মেলে না। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন ঋতুগুলো তাদের নিজস্বতা হারাচ্ছে।
রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার (কৃষি ও সিনপটিক) সূত্রে জানা গেছে, গত ১ সপ্তাহ থেকে কুড়িগ্রাম জেলায় দিনের বেলা তাপমাত্রা ৩৩ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে অবস্থান করছে। রাতে তাপমাত্রা কিছুটা কমে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসছে।
ভাদ্র মাসে কখনও মসুলধারে আবার কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। মাস খানেক ধরে নিয়মিত বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা গরম কমছে না প্রকৃতিতে। বৃষ্টির সময় কিছুটা ঠাণ্ডা অনুভূতি হলেও বৃষ্টি থেমে গেলেই ভ্যাপসা গরমে নাকাল হচ্ছে মানুষজন।
গত ১ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে কুড়িগ্রাম জেলায়। রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার (কৃষি ও সিনপটিক) সূত্রে জানা গেছে এই তথ্য।
নিয়মিত বৃষ্টির কারণে এসময় মানুষের কিছুটা স্বস্তি পাওয়ার কথা। তবে বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা গরম কমছে না। প্রকৃতিতে বিরাজ করছে উষ্ণ ও বৈচিত্র্যময় আবহাওয়া।
ভাদ্র মাসে শুরু হওয়া ভ্যাপসা গরম আশ্বিন মাস পর্যন্ত বিরাজমান থাকে (মধ্য আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর ও মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত)।
এ সময়ের এই ভ্যাপসা গরমের কারণ জানতে কথা হয় রাজীবপুর সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভূগোল বিষয়ের শিক্ষক শামছুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকার কারণে এবং সূর্যের আলো দিনব্যাপি না থাকায় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বৈশাখ মাস থেকে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে বাংলাদেশে। জ্যেষ্ঠ মাসে দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে তারমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠে যায়। অথচ বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকে এবং মানুষের শরীর থেকে ঘাম বের হলে শুকাতে চায় না। শরৎ ঋতুতে অর্থাৎ ভাদ্র ও আশ্বিনে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠা নামা করে। তাপমাত্রা কমলেও যেহেতু বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে সে কারণেই মূলত গরম বেশি অনুভূত হয়। এতে অস্বস্তি বেড়ে যায় জনজীবনে।
রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়াবিদ জাকির হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, বৈশাখ মাসে তাপমাত্রা বেশি থাকলেও বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে। আবার ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে তাপমাত্রা তুলনামূলক কম থাকলেও বাতাসে জলীয় বাষ্প খুব বেশি থাকে। তাই শরীর ঘেমে যায়। এই ঘাম সহজে না শুকানোর কারণে গরম বেশি অনুভূত হয়।
তিনি আরও জানিয়েছেন, ভাদ্র মাসে দিন ও রাতের বেশিরভাগ সময় আকাশে মেঘ থাকে। দিনের বেলা সূর্যের তাপ মেঘের বাধার কারণে ওপরে উঠতে পারে না সেজন্যও গরম সহজে কমতে চায় না। এ কারণে বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা গরম লাগছে এবং স্যাঁতসেঁতে অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রা যা আছে, তার চেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে।
গত ১ মাস থেকে রাজীবপুরে প্রায় নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির সময় কিছুটা স্বস্তি মিললেও বৃষ্টি শেষে আবারও সেই অস্বস্তিকর গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে।
রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে আরও জানা গেছে, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে সারা দেশেই গত বেশকিছু দিন থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এ সময় বাতাসে জলীয় বাষ্প সাধারণত ৯০ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে ওঠা নামা করছে। এই মাত্রায় জলীয় বাষ্প যদি বায়ুমণ্ডলে থাকে, তাহলে জলীয় বাষ্পের ঊর্ধ্বগমন ঘটে এবং জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘ তৈরি করে। এই মেঘ যে অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় সেখানেই বৃষ্টিপাত ঘটে। এক মেঘ থেকে অন্য মেঘের মধ্যে দূরত্ব থাকলে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। এছাড়াও এসময়ে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি এবং বাতাসের গতিবেগ কিছুটা কম হওয়ার কারণেও এমন গরম অনুভূত হচ্ছে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গত কয়েক বছর থেকে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতি বিভিন্ন রূপে বিরূপ আচরণ করছে। বাংলাদেশে শীতের ব্যপ্তিকাল কমে আসছে এবং বছরের বেশিরভাগ সময় গরম অনুভূত হওয়ার কারণ বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবহার বেড়েছে। একই সাথে বেড়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার। এতে জনজীবনে দৈনন্দিন ব্যয় বেড়েছে। বিদ্যুৎ বেশি ব্যবহার করার ফলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণও বেড়েছে।