একটি স্কুল গেটের সামনে দেখলাম বাচ্চাদের নিয়ে অভিভাবকদের জটলা। দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়ায় তাদের মধ্যে কী উচ্ছ্বাস! চা খাচ্ছেন, বাদাম খাচ্ছেন। পাশাপাশি-মুখোমুখি দাঁড়িয়ে-বসে সে কী আড্ডা! অথচ সবচে জরুরি জিনিস মাস্কটাই রেখেছেন তারা থুতনিতে-হাতে ঝুলিয়ে।
আক্ষেপ করে বলছিলেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাসিন্দা আনিসুর রহমান। সারা দেশে রবিবার স্কুল খুললেও আজ সোমবার করোনা পরবর্তী তার মেয়ের প্রথম স্কুল। তিনি বলেন, গতকাল ও আজ অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি মানার এই চিত্র দেখে আমি তো হতবাক। সকালে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে এসেছি। কিন্তু এ অবস্থায় আমি ভয় ও শঙ্কায় আছি।
দেড় বছরেরও বেশি সময় পর গতকাল রবিবার দেশের স্কুল-কলেজ খুলেছে। শ্রেণিকক্ষে ফিরতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। কোনো স্কুলে ফুল দিয়ে, কেউ বা বেলুন ও রঙিন কাগজ দিয়ে সাজিয়েছে স্কুলের ফটক ও প্রাঙ্গণ। কোনো কোনো স্কুল তাদের ক্লাসরুমও সাজিয়েছে। ছোটদের স্কুলের দেয়ালে পড়েছে তুলির নতুন আঁচড়ও। তাদের বরণ করে নেওয়া হয় সাদরে। তবে স্কুলের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মানলেও বাইরের ফটকে বেড়েছে জটলা। এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও। অধিদপ্তর মনে করছে, এভাবে জটলা থাকলে করোনা সংক্রমণ আবার বেড়ে যেতে পারে।
এ ব্যাপারে রবিবার অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম কভিড-১৯ নিয়ে নিয়মিত অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে বলেছেন, স্কুলের সামনে অভিভাবকদের জটলা করোনা সংক্রমণের বর্তমানের নিম্ন মুখিতাকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই অভিভাবকদের দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে। সংক্রমণের এই নিম্নমুখিতায় স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। একে অপরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে যেন কোনো অবস্থাতেই সংক্রমণের আগের চেহারা ফিরে না আসে।
এই মুখপাত্র আরও বলেন, করোনা মহামারীতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশ স্বস্তিদায়ক অবস্থানে রয়েছে। পুরো বিশ্বের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও করোনাভাইরাস ভীষণভাবে আক্রমণ করেছিল। এখনো দেখা যাচ্ছে এ অঞ্চলের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার পরিস্থিতি অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে একটু বেশি ঝুঁকির মাঝে আছে। এর পরেই রয়েছে ভারতের অবস্থান। এ দুই দেশে গত এক সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম, যদিও প্রতিটি প্রাণই অনেক মূল্যবান। সেই সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যেকোনো দেশের চেয়ে তুলনামূলকভাবে আমরা স্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছি।