আয়ানের বয়স আড়াই বছর। ওর জ্বর ছিলো টানা পাঁচ দিন। সঙ্গে সর্দি-কাশিও ছিলো। হঠাৎ করেই জ্বর ১০২ ডিগ্রি হয়ে যেত। সাপোজিটরি দিয়েও কমানো সম্ভব হতো না। কিছু খেতে পারতো না। বমিও করতো। এই পাঁচ দিনে ওর ওজন কমেছে এক কেজিরও বেশি।
বলছিলেন রাজধানীর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বাগানবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সেলিনা আফরোজ। বার্তাটোয়েন্টিফোরকে তিনি বলেন, চিকিৎসকের কাছে নেয়ার পর করোনা টেস্ট দেয়া হয়। পরীক্ষা করানোর পর নেগেটিভ আসে। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে প্যারাসিটামল, এজিথ্রোমাইসিন ও লেভোসালমিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি নাকে নরসল ড্রপ দিতে হয়েছে। নেবুলাইজেশনও করতে হয়েছে। এখন জ্বর না থাকলেও কাশি রয়ে গেছে।
সেলিনা আফরোজ জানান, তার ছেলের পর তার মেয়ে ও হাজবেন্ডও সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। জ্বর ১০০ এর নিচে নামছে না কারো। কাশিও রয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন পাঁচ দিন পর কমবে।
সেলিনা আফরোজের মতো রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের ঘরে ঘরে সর্দি-কাশি-জ্বরের প্রকোপ চলছে। ঘরে-বাইরে অনেকেই খুকখুক করে কাশছে। কেউবা নাক টানছে। চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে জ্বর-সর্দি-কাশি, গায়ে-হাতে ব্যথা নিয়ে রোগীরা আসছেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর-সর্দি-কাশির তীব্রতা থাকছে তিন থেকে সাত দিন। জ্বর সেরে গেলেও শুকনো কাশি, দুর্বলতা ভোগাচ্ছে অনেককে। অন্যান্য ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই এ ক্ষেত্রেও একসঙ্গে পরিবারের একাধিক সদস্য জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। অনেকের গলাব্যথাও হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিচলিত হওয়া যাবে না। জ্বর কিংবা ঠান্ডা, গলা খুসখুস মানেই করোনা নয়। জ্বর হলেই আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
দেশে দিন-রাতের তাপমাত্রা বাড়ছে-কমছে। এই রোদ এই বৃষ্টি। এই গরম, এই ঠান্ডা। খেয়ালি এই আবহাওয়ার সঙ্গে বাড়ছে সর্দি-কাশি-জ্বরের মতো মৌসুমি রোগ। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর ও গ্রামে চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোয়ও প্রতিদিন বাড়ছে জ্বর, সর্দি, কাশি, শরীর ব্যথা নিয়ে আসা রোগীর ভিড়। কেউ আবার বাসায় বসে ঘরোয়া চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে এ উপসর্গগুলো ব্যাপক হারে দেখা দিচ্ছে। শুধু শিশু নয়, গর্ভবতী মা’সহ সব বয়সিই এতে কাবু হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীসহ সারা দেশের হাসপাতালের আউটডোরে বেশির ভাগ শিশুই জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে আসছে। হাঁচি-কাশির সঙ্গে শরীরে তীব্র ব্যথাও হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কিছু মানুষের করোনা ও ডেঙ্গু ধরা পড়লেও অধিকাংশই ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শফি আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, এখন শিশুদের মধ্যেও জ্বর, সর্দি-কাশির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সাধারণ জ্বর এবং ডেঙ্গুজ্বর দুটিই শিশুদের জন্য খারাপ। যেহেতু তিনদিনের মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্ত করা যায়। তাই শিশুদের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাটা করালেই হয়। ডেঙ্গু না হলে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। এখন মৌসুমি জ্বরের প্রকোপ লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে বাসায় চিকিৎসা নিলে শিশুরা সুস্থ হয়ে উঠবে। তবে ডেঙ্গু হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
চিকিৎসকরা জানান, গলাব্যথা, খুসখুস ভাব, নাক বন্ধ বা অনবরত হাঁচি, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ, দুর্বল লাগা ও ক্ষুধামন্দা দেখা দিলে চিকিৎসা করাতে হবে। উপসর্গে সাইনাস, টনসিলে প্রদাহ হতে পারে। সতেজ ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। একই সঙ্গে আদা-লং-এলাচ-লেবু চা, তুলসী পাতা, মধু ও লেবুর রসসহ দেশীয় ফলের রস পান করার জন্যও বলা হয়েছে।