মানসিক স্বাস্থ্য মারাত্মক বিপর্যয়ে পড়েছে। করোনাকালে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বিষণ্ণতাজনিত রোগ পাঁচ গুণ বেশি এবং উৎকণ্ঠাজনিত রোগ ১০ গুণ বেড়েছে। পুরুষদের তুলনায় নারীরা মানসিক সমস্যায় বেশি ভুগছেন। গবেষণায় অংশ নেওয়া পুরুষদের মধ্যে ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং আর্ক ফাউন্ডেশনের দুই বছরের পৃথক গবেষণায় এ চিত্র পাওয়া গেছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ২০১৮ সালে করা জরিপে প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে মানসিক রোগের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে বিষণ্ণতার হার পাওয়া যায় ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। আর উৎকণ্ঠাজনিত সমস্যা ছিল ৪ দশমিক ৭ শতাংশের।
আর্ক ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের করোনাকালে করা গবেষণায় দেখা যায়, বিষণ্ণতার হার ৩২ দশমিক ২ শতাংশ এবং উৎকণ্ঠার হার ৪৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ করোনাকালে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বিষণ্ণতাজনিত রোগ পাঁচ গুণ বেশি এবং উৎকণ্ঠাজনিত রোগ ১০ গুণ বেড়েছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, পুরুষদের তুলনায় নারীরা মানসিক সমস্যায় বেশি ভুগছেন। গবেষণায় অংশ নেওয়া পুরুষদের মধ্যে ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। অন্যদের তুলনায় শিক্ষার্থী ও বেকাররা অধিক সংখ্যায় মানসিক রোগে ভুগছেন। গবেষণায় অংশ নেওয়াদের মধ্যে ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ চাকরিজীবী এবং ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। গবেষণায় অংশ নেওয়াদের ৭৫ শতাংশই রাজধানীতে বাস করেন। এ চিত্র বিশ্নেষণ করে গবেষকরা দেখিয়েছেন, সাধারণ সময়ের চেয়ে করোনাকালে মানসিক সমস্যা বেড়েছে।
গবেষণায় বলা হয়, গত এক বছরে দেশে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে প্রায় ১৪ হাজার। এ সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সুনির্দিষ্টভাবে করোনা নিয়ে কুসংস্কার ও ভীতির কারণেই পাঁচজনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক, চিকিৎসা প্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা, মৃত্যুভয়, অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও বেকারত্বের কারণে বাড়ছে মানসিক সংকট। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে মানসিক চাপ বেড়েছে। এমনকি মহামারিকালে বেড়েছে পারিবারিক ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাও।
সঠিক পরিচর্যা পেলে মানসিক সংকটে থাকা ব্যক্তিরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মানসিক সংকটে থাকা ব্যক্তিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।