রংপুরের হারাগাছে পুলিশের নির্যাতনে তাজুল ইসলামের (৫৫) মৃত্যুর অভিযোগ উঠলেও তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা উল্লেখ নেই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে।
শুক্রবার(৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ তথ্য জানিয়েছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজিবুল ইসলামের বরাত দিয়ে তিনি জানান, তাজুল ইসলামকে মাদক সেবনের অভিযোগে আটক করা হলেও তাকে কোন নির্যাতন করেনি পুলিশ। আর তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্নের উল্লেখ নেই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে।
আবু মারুফ হোসেন বলেন, ‘ঘটনাস্থলে তাজুল ইসলামের স্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হয়েছে বলে ঘটনার পর সাক্ষ্য দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। কিন্তু কিছু লোক পুলিশের নির্যাতনে তাজুলের মৃত্যুর হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়েছে। পরে থানা ঘেরাও করে হামলা ও ভাঙচুর করেছে।’
ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজিবুল ইসলাম তাজুল ইসলামের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। গত বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেয়েছে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানায়, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে নতুন বাজার বছির বানিয়ার তেপতি নামক স্থানে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় মাদক সেবনের অভিযোগে হারাগাছ পৌর এলাকার শওকত আলীর ছেলে তাজুল ইসলামকে আটক করা হয়। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে তাজুলের মৃত্যু হয়। পুলিশের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়রা বিক্ষোভ মিছিলসহ থানা ঘেরাও করেন। এসময় তারা থানা ভবনে ইট পাটকেল নিক্ষেপসহ ভাঙচুর চালায়। উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বিক্ষোভকারীরা পিছু হটলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ।
তবে ঘটনার পর থেকে পুলিশি নির্যাতনে তাজুল ইসলামের মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে পুলিশ। এ ঘটনায় সেদিন রাতেই নিহতের ছোট ভাই বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন।
গত বুধবার বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি রুল ও আদেশ দেন।
আদেশে তাজুল ইসলামকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত ৪ সদস্যের কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আগামী ১১ নভেম্বরের মধ্যে মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও অপমৃত্যুর মামলার অনুলিপি আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।