মৌসুমের শুরুতে বিপর্যয়ের শঙ্কা পর্যটনখাতে

চট্টগ্রাম, জাতীয়

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 23:48:18

শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে দেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষের ঘোরাঘুরি শুরু হয়। দেশের আবহাওয়া, মানুষের সক্ষমতা ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় রেখে অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চলে বেড়ানোর মৌসুম। আর এ দিনগুলোতে পর্যটকদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধার অফার নিয়ে মাঠে নামে কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

তবে এবারের পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। পর্যটনখাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, চলতি বছরের ডিসেম্বরে হতে পারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ জন্য দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। চলছে নিজেদের মধ্যে হিসাব কষাকষি। নানা ভাবে হচ্ছে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ। পাড়া-মহল্লায় শুধু এখন নির্বাচনী আমেজ।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছে, ইতোমধ্যে স্কুল-কলেজগুলোতে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। এ মাসের শেষ দিকেই তা শেষ হবে। আগামী মাস থেকেই জমে ওঠার কথা পর্যটন ব্যবসা। কিন্তু রাজনৈতিক শঙ্কার কথা ভেবে এখন অনেকেই আগাম বুকিং দিচ্ছে না। আগে এই সময়েই কক্সবাজারের হোটেলগুলো ২-৩ মাসের জন্য আগাম বুকিং হয়ে যেত। এবার তা হয়নি। কারণ বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী শিবিরের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভর মৌসুমে পর্যটনখাতে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

হোটেল-মোটেল মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের বেশিরভাগ হোটেল-মোটেল এখনো ফাঁকা। প্রতিবছর ডিসেম্বরের প্রথম দিকে সব কক্ষই বুকিং হয়ে যায়। আগে থেকে বুকিং না দিলে কোনো কক্ষ পাওয়া যায় না। কিন্তু এই বছর প্রায় সব কক্ষ এখনো ফাঁকা রয়েছে।

কক্সবাজারের হোটেল কক্সটুডের কর্মকর্তা আবু তালেব বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর এখনো তেমন কোনো পর্যটক নেই। আমরা সারা বছর ডিসেম্বর মাসের দিকে তাকিয়ে থাকি। কিন্তু এবার আগাম কোনো বুকিং নেই। তাই বড় ধরনের লোকসান হতে পারে। আমাদের ভাগ্যে আসলে কী ঘটবে তা বলা মুশকিল।’

হোটেল ব্যবসায়ী এম বেদারুল আলম বলেন, ‘সামনে ভরা মৌসুমে আমরা পর্যটক আশা করেছিলাম। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি দেখে অনুমান করা যাচ্ছে যে জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব পড়বে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে। লোকসানের আশঙ্কায় হাজারো ব্যবসায়ীর মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। তাই নির্বাচনের মুহূর্তে প্রশাসনকে কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে।’

লোকাল পর্যটক গাইড প্রতিষ্ঠান সেন্টমার্টিন ট্যুরিজমের পরিচালক হেলা উদ্দিন সাগর বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা সাধারণত কক্সবাজার কেন্দ্রিক ট্যুরিজম সেবা দিয়ে থাকি। তবে জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে হওয়ায় আমরা শঙ্কায় আছি। কারণ এ সময় পর্যটন মৌসুম। আর নির্বাচনের সময় পর্যটকদের মনে নিরাপত্তা নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করে। যার কারণে মনে হচ্ছে প্রতি বছরের চেয়ে এ বছর ২০ শতাংশ পর্যটক কম পাব।’

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি কাজি রাসেল আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে পর্যটকদের মনে এক ধরনের আতঙ্ক রয়েছে। ঠিক তেমনভাবে আমরা যারা হোটেল মালিক আছি তাদের মনেও শঙ্কা রয়েছে। আর নির্বাচনে কোনো কারণে সহিংসতা হোক বা না হোক এই সময় পর্যটকরা কোথাও ঘুরতে আসতে চায় না।’

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। সমুদ্র সৈকতের ১১টি পয়েন্টে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর